ঢাকা ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোজার আবেদন পাপমুক্ত জীবন

মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
রোজার আবেদন পাপমুক্ত জীবন

রোজা বান্দা ও আল্লাহর মাঝে মেলবন্ধনের সেতু। দেহমন পরিচর্যার মধ্য দিয়ে আত্মিক শুচিশুদ্ধতা লাভের এক অনন্য মাধ্যম। তাকওয়া অর্জন তথা পাপমুক্ত জীবন গঠনই সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (অর্থাৎ পাপমুক্ত জীবন গঠন করতে পার)।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।

তাকওয়া কী?

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আদেশ মেনে চলা ও নিষেধ থেকে বিরত থাকাই হলো তাকওয়া, গোনাহমুক্ততা বা আল্লাহভীতি। যাপিত জীবনের সব কাজকর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর শতভাগ আনুগত্য প্রকাশের বিরামহীন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে রবের সন্তুষ্টি লাভে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিকে মুত্তাকি বলে। এক কথায় বলা যায়, তাকওয়াসম্পন্ন ব্যক্তিকে মুত্তাকি বলে। রমজানের রোজা আমাদের পাপমুক্ত জীবন গড়ে মুত্তাকিদের সারিতে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়।

মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য

গোনাহ না ছেড়ে, পুষ্পশোভিত খোশবুময় জীবনের অধিকারী না হয়ে কেউ মুত্তাকি হতে পারে না। তাই মুত্তাকি হওয়ার প্রধান শর্ত গোনাহ বর্জন করা ও কোরআন-সুন্নাহর যথার্থ অনুসরণ করা। পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকিদের পরিচয় এবং তাদের মৌলিক পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এটি এমন কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি সুপথপ্রদর্শনকারী মুত্তাকিদের জন্য, যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক (প্রদত্ত সম্পদ) দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে (কোরআন) তাতেও এবং আপনার আগে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে (তাওরাত, যাবুর) তাতেও এবং তারা পরকালকে নিশ্চিত বলে বিশ্বাস রাখে। এরাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, এরাই পরম সফলকাম।’ (সুরা বাকারা : ২-৫)।

ঈমান ও সফলতার মাপকাঠি

সুরা বাকারায় বর্ণিত মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্যগুলো ঈমান ও সফলতার মাপকাঠি। খাঁটি মোমিন এবং দুনিয়া-আখেরাতে সফল হতে হলে উল্লিখিত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বান্দার মাঝে থাকা আবশ্যক। মুত্তাকিদের এ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ইসলামের আকিদা, ভিত্তি ও ইবাদতের সমন্বিত মৌলিক রূপ। যেমন- এক. অদৃশ্যের প্রতি ঈমান রাখা তথা মানুষের মেধা ও যুক্তিতে না ধরলেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর দেওয়া সব সংবাদকে সত্য জানা। দুই. কোরআন ও এর আগে অবতীর্ণ আসমানি কিতাবগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য কিতাব বলে বিশ্বাস করা। (তবে পূর্ববর্তী কিতাবগুলো ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিকৃতি করে ফেলেছে)। তিন. কোরআনের পর আর কোনো আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হবে না এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর পর কোনো নবী আসবে না এবং মৃত্যুর পর মানুষের আমলের হিসাব-নিকাশ হবে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য তথা পরকাল সত্য- এ বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশ। এটি মুত্তাকি হওয়ার জন্য আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য। চার. নামাজ কায়েম করা তথা নামাজের সুন্নত, ওয়াজিব, আরকান ও আহকামসহ যথাসময়ে বিনয় ও একাগ্রচিত্তে আদায় করা। পাঁচ. আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে দান-সদকা করা, জাকাত দেওয়া ও হজ আদায় করা। এগুলো মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য। এ বৈশিষ্ট্যগুলো যাদের মাঝে আছে, কোরআনের ভাষায় তারা সফলতার স্বর্ণশিখরে অধিষ্ঠিত। মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত। গোনাহমুক্ত পবিত্র জীবনের অধিকারী। কোরআনে বর্ণিত পাঁচটি মৌলিক গুণে গুণান্বিত হতে পারা সৌভাগ্য ও চরম সফলতা। এ সৌভাগ্য ও সফলতা লাভের চেষ্টায় যেন বান্দা সদারত থাকে, এ বার্তা নিয়েই রোজা এসেছে আমাদের দোরগোড়ায়।

লেখক : প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত