ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মিথ্যার যত ক্ষতি

মাওলানা শাহাদাত হোসাইন
মিথ্যার যত ক্ষতি

কোনো অসত্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যরূপে উপস্থাপন করাই মিথ্যা। মিথ্যা মানুষকে ধ্বংসের পথে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত করে। আর আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিপতিত করে। আল্লাহতায়ালা মুসলিম জাতিকে কথা, কাজ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নতা থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সত্য ও সত্যবাদিতা মোমিন বান্দার গুণ। মিথ্যা ও মিথ্যাবাদিতা হতভাগা ও দুষ্ট লোকের গুণ। মিথ্যা ও মিথ্যাবাদিতা মুনাফিকের চিহ্ন। রাসুল (সা.) বলেছেন, মোনাফেকের আলামত তিনটি, যার প্রথমটি হলো- কথায় মিথ্যা বলা। (মুসলিম : ৫৯)। মিথ্যা বর্জন করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে জানো না সে বিষয়ের পিছে পড় না’। (ইসরাইল : ৩৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার করো। (সুরা হজ : ৩০)। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪৩৭৫)।

মিথ্যার ব্যক্তি ও সামাজিক ক্ষতি

মিথ্যুক ব্যক্তি তার মিথ্যা দ্বারা শুধু নিজেরই ক্ষতি করে না, বরং পুরো সমাজের ক্ষতি করে। মিথ্যার কারণে পুরো সমাজব্যবস্থা কলুষিত হয়। ক্ষতির সম্মুখীন হয় রাষ্ট্রব্যবস্থাও। মিথ্যার কারণে সমাজে কপটতা ও পাপাচারের প্রসার ঘটে। কেননা, মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। হাদিসে এসেছে, সত্যে মুক্তি আর মিথ্যায় ধ্বংস। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের জন্য সত্য আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য। কেননা, সত্য কল্যাণের পথ দেখায়। আর কল্যাণ পথ দেখায় জান্নাতের। যে লোক সর্বদা সত্য বলে এবং সত্য বলার প্রয়াসী হয়, এক পর্যায়ে আল্লাহর কাছে তার নাম অতি সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাক। কেননা, মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ পথ দেখায় জাহান্নামের। যে লোক সর্বদা মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা বলার প্রয়াসী হয়, একপর্যায়ে আল্লাহর কাছে তার নাম অতি মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়। (বোখারি : ৬০৯৪, মুসলিম : ২৬০৭)।

একটি মিথ্যা অনেক মিথ্যার জন্ম দেয়। কারণ একটি মিথ্যাকে সত্য প্রমাণিত করতে আরও অনেক মিথ্যা বলতে হয়। গোয়েবলসের সেই বিখ্যাত উক্তি- আপনি যদি একটি বিশাল মিথ্যা বলেন এবং সেটা বারবার সবার সামনে বলতে থাকেন, তাহলে মানুষ এক সময় সেটাকে সত্য বিশ্বাস করতে শুরু করবে। মিথ্যার কারণে সামাজিক আস্থা হারিয়ে যায়। কারণ মিথ্যুকরা অন্যকেও মিথ্যুক ভাবতে থাকে। যার কারণে সামাজিক ভারসাম্য ঠিক থাকে না। মিথ্যুক নির্লজ্জ হয়। আর নির্লজ্জ ব্যক্তি সব কিছু করতে পারে (বোখারি : ৩৪৮৩)। বিবেক ও রুচিতে বাধে না তার। ফলে ব্যাপকভাবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

মিথ্যায় আখেরাতের ক্ষতি

মিথ্যার লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা দুনিয়াতেই শেষ নয়, বরং এর অপদস্থতা মিথ্যুককে আখেরাতেও ভোগ করতে হবে। হাদিসে মিথ্যা ও মিথ্যাবাদীর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। নবী (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। এক. ব্যভিচারী বৃদ্ধ। দুই. মিথ্যুক নেতা। তিন. অহংকারী গরিব। (ইবনে হিব্বান : ৪৪১৩)।

মিথ্যার যত ক্ষতি

মিথ্যা ঈমানের বিপরীত বিষয়। নবী (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী! মোমিন কি মিথ্যা বলতে পারে? উত্তরে নবী (সা.) বলেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে মিথ্যা বলতে পারে না। (বায়হাকি : ৪৮০৫, আল মুসান্নাফ : ১৪০)। মিথ্যাবাদী আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। মিথ্যাবাদী আল্লাহর রহমত ও হেদায়াত থেকে বঞ্চিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে হেদায়াত দেন না’। (সুরা যুমার : ৩)। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, তখন তার থেকে রহমতের ফেরেশতা এক মাইল অথবা দুই মাইল দূরত্বে চলে যায়। (আল মুসান্নাফ ফি মাকারিমুল আখলাক : ১৪৬)।

মিথ্যার প্রতি অনীহা ও ঘৃণা থাকা মোমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। মিথ্যার প্রতি নিরুৎসাহিত করতেন সাহাবায়ে কেরাম। ইবনে ওমর (রা.) তার খুতবায় বলতেন, ‘যে মিথ্যা বলল, সে পাপ করল, আর যে পাপ করল, সে ধ্বংস হলো।’ মোমিন ব্যক্তির দিলমন পাক থাকে। মিথ্যার ময়লা তাকে অপবিত্র করতে পারে না। মিথ্যা মোমিন ব্যক্তির মর্যাদাকে হ্রাস করে। ব্যক্তিত্বকে ত্রুটিযুক্ত করে। নবী (সা.) বলেন, মোমিনের চরিত্রে সব ধরনের কমতি থাকতে পারে। কিন্তু সে কখনও খিয়ানতকারী ও মিথ্যুক হবে না। (বায়হাকি ১০/১৯৭)।

মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায়

নিজের মধ্যে মিথ্যাকে অনুভব করলে দ্রুত তওবা করা। মিথ্যার কারণগুলো এড়িয়ে চলা। সবসময় সত্য কথা বলা ও নিজেকে জবাবদিহির আওতায় রাখার চেষ্টা করা। ভেবেচিন্তে কথা বলা। খুব সতর্ক থাকা, যাতে কথা ও কাজে মিথ্যার আশ্রয় নিতে না হয়। ভাবনায় স্থির করা- ‘মিথ্যা দুনিয়া ও আখেরাতে অশান্তির কারণ আর পরকালে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মাধ্যম।’ রাসুল বলেছেন, নিশ্চয়ই সততা ভালো কাজের পথ দেখায়। আর ভালো কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। (মুসলিম : ২৬০৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত