ঢাকা ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুফিকোষ

সুফিকোষ

পীরের দায়িত্ব অতি গুরুত্বপূর্ণ

পীর-মুরীদের ছেলছেলা কত পবিত্র, কত গুরুত্বপূর্ণ। এই পবিত্র সম্বন্ধ বর্ত্তমান যুগে রছমে পরিণত হইয়াছে। যেখানে অর্থের অধিকার, যেখানে প্রেমের অধিকার নাই। খোদার আশ্রয় লইলে অর্থকে পাওয়া যায়, কিন্তু যেখানে অর্থের আকাঙ্ক্ষা প্রবলতর, সেখানে খোদার আকাঙ্ক্ষা লঘুতর, যে হৃদয়ে গায়রে খোদার পূজা, সে হৃদয় খোদার গ্রহণীয় নহে। খোদা কাহারও সহিত শরীক হইতে চান না। একই সময় মানুষ দুই বস্তুর আশেক হইতে পারে না। প্রেমিক প্রেমময়ের আশেক অর্থের আশেক নহে। যিনি প্রেমকে এখতেয়ার করিয়াছেন, তিনি ধন্য হইয়াছেন। প্রেমই সত্য, প্রেমই পাক, ইহা স্পর্শমণি, ইহার সংস্পর্শে অলি-আল্লাহ মিলে, রাছুল মিলে, খোদা মিলে। খোদা প্রেমকে জগতে দিয়াছেন এই হেতু যে এন্্ছান ইহারই সাহায্যে খোদা তক্্ পৌঁছাইতে পারে। খোদা তাঁহার হাবিবকে দুনিয়ার বুকে পাঠাইয়া ছিলেন এই হেতু যে, তিনি ইনছানকে ঐ তরতীব শিক্ষা দিবেন, যে তরতীব দ্বারা সে প্রেম হাছিল করিতে পারে ও প্রেমের সাহায্যে প্রেমময়ের সান্নিধ্য লাভ করিতে পারে।

প্রেমই খোদা প্রাপ্তির প্রধান উপকরণ

আঁ-হজরত (দ:) প্রেমিক-প্রবর হজরত আলী (রা:) কে মারেফতের তরতীব খাছভাবে শিক্ষা দিয়াছিলেন এবং হজরত আলী (রা:) হইতে ছেলছেলাক্রমে হজরত পীরাণপীর এবং হজরত পীরাণপীর হইতে পীর মুর্শিদ তক্্ শিক্ষা জারী হইয়াছে। তাঁহা হইতে আঁ-হজরত (দ:) তক এবং তাঁহা হইতে খোদা তক পৌঁছান যায়। ইহার অর্থ এই নয় যে, সারা জীবনটী ধরিয়া এই ক্রম অতিক্রম করিতে হয়, বরং প্রেমিক যুগপৎ প্রেমময় তক পৌঁছাইতে পারে আঁ-হজরতের মধ্যবর্ত্তিতায়। প্রেম একটি সেতু স্বরূপ, যাহার এক প্রান্তে প্রেমময় ও অপর প্রান্তে প্রেমিক। প্রেমণ্ডরজ্জু দৃঢ়রূপে পাকড়াও করিলে পীরের সাহায্যে আঁ-হজরত ও আঁ-হজরত (দ:) এর সাহায্যে খোদা তক্্ পৌঁছাইতে পারে; কিন্তু সকলের মূলে চাই নিষ্কলুষ প্রেম!

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর উপদেশ

১. শরীয়ত ও তরীকত পরস্পর সংশ্লিষ্ট। শরীয়ত হইতেছে ভিত্তি, আর তরীকত হইতেছে কাঠামো। শরীয়ত যত মজবুত হইবে, তরীকত ততই পোখ্তা হইবে। শরীয়ত পাঁচটি স্তম্ভের উপরস্থিত, যথা- কলেমা, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ্জ। প্রথম তিনটি সর্ব্বসাধারণের জন্য মনোনীত, জাকাত ও হজ্জ সম্পন্ন-ব্যক্তির পালনীয়।

২. তরীকতে অগ্রসর হইলে শরীয়তর পাবন্দ হওয়া আবশ্যক। তরীকতের প্রথম পাঠ মহব্বত। খোদার উপর মহব্বত, রছুলের উপর মহব্বত, পীরের উপর মহব্বত, অবশেষে সৃষ্টির উপর মহব্বত।

৩. ২য় পাঠ চরিত্র গঠন। যাহার চরিত্র নাই, তাহার কিছুই নাই। তাহার শরীয়ত ও তরীকত উভয়ই নিষ্ফল।

৪. ৩য় পাঠ চরিত্র গঠিত হইলে খোদীকে (আমিত্বকে) বর্জ্জন করিতে হইবে, নিজকে ক্ষুদ্রতম মনে করিতে হইবে, অভিমানকে বিদায় দিতে হইবে, অপরের জন্য স্বার্থকে বলি দিতে হইবে।

৫. ৪র্থ পাঠ রেয়াাজাত (কৃচ্ছ্র-সাধন)। আজকার ও আশগাল, মোরাকেবা, তছোওয়ার, অতিরিক্ত নামাজ, অতিরিক্ত রোজা, দরূদ শরীফ, আবৃত্তি, তফক্কোর, নির্জ্জনবাস ও নিজ্জন চিন্তা।

৬. নফ্্ছকে (কুপ্রবৃত্তিকে) ফানা করাই তরীকতের উদ্দেশ্য। হাদিছে আছে ‘মুতু কাবলা আন্্তামুতু’ অর্থাৎ ‘মওতের পূর্ব্বে মরো’। নফছ বশীভূত না হইলে মা’রেফত হাছেল হয় না। শুষ্ক শরীয়ত খোদার নৈকট্য লাভ করিতে অসমর্থ। যতই নফছ আয়ত্ত্বাধীন হইবে, যতই আমিত্বের বিনাশ হইবে, ততই ঐশী মহব্বত বাড়িতে থাকিবে এবং ততই খোদার ভেদ (রহস্য) অনুভূত হইবে।

(সূত্র : খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) (২০০১), আহ্ছানিয়?া মিশনের মত ও পথ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন; পৃ: ২১-২২)

বি. দ্র.- লেখাটিতে লেখকের বানানরীতি হুবহু বহাল রাখা হয়েছে

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত