ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসতেগফার আল্লাহ প্রেমের সেতুবন্ধন

মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ
ইসতেগফার আল্লাহ প্রেমের সেতুবন্ধন

সকাল-সন্ধ্যা, রাত-দিন অষ্টপ্রহর মানুষ গোনাহে জড়িয়ে আছে। নফস ও শয়তানের চক্রান্তে পড়ে তারা তাদের মেহেরবান পরওয়ারদিগারের বিদ্রোহী বান্দায় পরিণত হচ্ছে। দিন দিন গোনাহের মসিবত পাহাড়সম ঢেউয়ের মতো মানুষের ওপর এমনভাবে আছড়ে পড়ছে, বাহ্য দৃষ্টিতে যার থেকে বেঁচে থাকা খুবই দুষ্কর। কিন্তু কোরআন ও সুন্নাহ মানুষকে অভয় দিয়েছে যে, নবী আলাইহিস সালামরা ব্যতীত অন্য কেউ গোনাহ ম্ক্তু নয়, বরং প্রতিটি মানুষ থেকেই ভুল-ভ্রান্তি-বিচ্যুতি প্রকাশ হয়ে থাকে। এটাই মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাব। কিন্তু উত্তম গোনাহগার তো ওই ব্যক্তি যে নিজের কৃত গোনাহের কারণে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। যে ব্যক্তির এই অনুভূতি থাকবে যে আমার বদ আমলগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং আমার রব আমাকে এই সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন, সে কখনো নিজের কৃত গোনাহে অনড় থাকতে পারে না। গোনাহের জন্য সে লজ্জিত হবেই। অনুতাপ তার আসবেই। কোরআন কারিমের দশটিরও বেশি আয়াতে গোনাহ থেকে তওবা-ইসতেগফারের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। অসংখ্য হাদিসে ইনাবত (আল্লাহতায়ালার সমীপে নিজেকে সমর্পণ করা) ও রুজু ইলাল্লাহ (আল্লাহতায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তন করার) ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেন গোনাহ করার পর মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে যায়। কোরআনের ভাষায় ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা (গোনাহ করে) নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ থেকে তোমরা হতাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : ৫৩)।

একনিষ্ঠতার সঙ্গে তাওবা-ইসতেগফার এবং আল্লাহতায়ালার সামনে নিজের গোনাহের কারণে লজ্জিত-অনুতপ্ত হওয়ার দ্বারা উভয় জাহানে সফলতা ও কল্যাণ অর্জিত হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইসতেগফারকে আবশ্যক করে নিবে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রত্যেক সংকীর্ণতার মধ্যে সহজতা এবং প্রতিটি পেরেশানিতে মুক্তির পথ বের করে দেন। এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন, যার চিন্তাও সে কখনো করেনি। (সুনানু আবি দাউদ)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের দিন যে ব্যক্তি নিজের আমল নামায় ইসতেগফারের আধিক্য দেখতে পাবে তার জন্য এটা সুসংবাদ হবে। (সুনানু ইবনু মাজাহ)।

ইসতেগফার আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি আমল। হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা তার বান্দার তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়। (বোখারি ও মুসলিম)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামণ্ডএর কাছেও ইসতেগফার সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে লোক সকল! আল্লাহতায়ালার কাছে তোমরা তওবা করে নাও। কারণ আমি প্রতিদিন শতবারের বেশি তওবা করে থাকি। (সহিহ মুসলিম)। হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাযি.) বর্ণনা করেন, আমরা এক মজলিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইসতেগফারের এই বাক্যটি শতবারের বেশি পড়তে শুনেছি। (সুনানু আবি দাউদ)। অনেকেই এই কথা বলে বেড়ায় যে, গোনাহ করা অবস্থায় তাওবা করার দ্বারা কী উপকার সাধিত হবে আমাদের? এমন কথা ঠিক নয়। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সঙ্গেহ ইসতেগফার করে তাকে গোনাহের উপর অনড় গণ্য করা হবে না। যদিও দিনের মধ্যে ৭০ বারের বেশি তার থেকে গোনাহ প্রকাশিত হয়ে যায়। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন, গোনাহের ওপর অনড় থাকে ওই ব্যক্তি, যে ইসতেগফার করে না ও নিজের গোনাহের ওপর লজ্জিত হয় না। ইবনুল মালিক (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি গোনাহের ইসতেগফার করে এবং এই জন্য অনুতপ্ত হয়, সে গোনাহের ওপর অনড় সাব্যস্ত হবে না। তওবার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে : ১.ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ কৃত গোনাহ পরিত্যাগ করবে। ২. ওই গোনাহের কারণে লজ্জিত হবে। ৩. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করবে। যদি কারো উল্লিখিত শর্তের কোনো একটি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তার তওবা পরিপূর্ণ হবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি তওবা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত