ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানুষ হত্যা মহাপাপ

শরিফ আহমাদ
মানুষ হত্যা মহাপাপ

ইদানীং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলছে জুলুম নির্যাতন। দৈনিক গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ ইসলামে মানুষ হত্যা ভয়ংকর অপরাধ। কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেন, আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মোমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হবেন। তাকে অভিশাপ দেবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি। (সুরা নিসা:৯৩) নবীর ভাষায় হত্যাকে কবিরা গুনাহ বলা হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সর্ববৃহৎ কবিরা গুনাহ হচ্ছে চারটি। এক. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। দুই. মানুষ হত্যা করা। তিন. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। চার. এবং মিথ্যা কথা বলা। (সহিহ বোখারি: ৬৮৭১)।

মানুষ হত্যায় সতর্কবার্তা : মহান আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন। একজনের জীবন রক্ষার মাধ্যমে সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। বস্তুত আমার রাসুলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছে। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে বহু লোক পৃথিবীতে সীমালংঘন করে যেতে থাকে। (সুরা মায়েদা : ৩২) একজন মানুষের জীবন আল্লাহর কাছে কত দামি হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ একজন মুসলিম হত্যা অপেক্ষা। (জামেতিরমিজি:১৩৯৫, নাসায়ী:৩৯৮৭)। হত্যাকাণ্ডের পরকালীন শাস্তি ভয়াবহ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আসমান ও জমীনের সকল অধিবাসী মিলেও যদি কোনো মুমিনের রক্তে হাত রঞ্জিত করে তথাপিও আল্লাহ তাআলা তাদের আগুনের উত্তাপ আস্বাদন করাবেন। (জামে তিরমিজি: ১৩৯৮)।

শয়তানের প্ররোচনায় হত্যা : মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থের ফাঁদে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শয়তানের প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ করে বসে। কোরআনে শয়তানের পরিচয় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মুমিন বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বনী ইসরাইল: ৫৩) কোরআন হাদিসে শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কেহ তোমাদের মুসলিম ভাইয়ের প্রতি কখনো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করবে না। কারণ সে জানে না যে, ওই অস্ত্র দ্বারা শয়তান তাকে আঘাত করতে প্ররোচিত করছে এবং এর ফলে সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ:২/৩১৭, ফাতহুল বারি: ১৩/২৬, সহিহ মুসলিম: ৪/২০২০)

মানুষ হত্যার প্রাথমিক শাস্তি : ইসলামে মানুষ হত্যার প্রাথমিক শাস্তির বিধান আছে। আর সেটি হলো কিসাস অর্থাৎ হত্যার পরিবর্তে হত্যা। কিসাসের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! নিহতদের সম্বন্ধে তোমাদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ বিধিবদ্ধ করা হলো। স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। কিন্তু যদি কেহ তার ভাই কর্তৃক কোনো বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, তাহলে যেন ন্যায়সঙ্গত ভাবে পাওনা সাব্যস্ত করা হয় এবং তা সদ্ভাবে পরিশোধ করে। এটা তোমাদের রবের পক্ষ হতে লঘুবিধান ও করুণা। অতঃপর যে কেহ সীমা লঙ্ঘন করবে তার জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। (সুরা বাকারা:১৭৯) তবে নিহতের পরিবার যদি যায় ক্ষমা করে দিতে পারে। অথবা দিয়াত অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে ক্ষমা করে দেওয়ার অধিকার রাখে। সেটা তাদের একান্ত ও ঐচ্ছিক বিষয়।

লেখক: আলেম ও কবি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত