ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লজ্জা নারীর অলঙ্কার

শরিফ আহমাদ
লজ্জা নারীর অলঙ্কার

ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা একটি মহৎ গুণ?। এটা নারী-পুরুষ সবার জন্য অপরিহার্য। লজ্জা মানুষকে ভালো কাজের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। এই লজ্জা একটি নারীর জীবন সুন্দর করে তোলে। সমাজে প্রকাশিত হয় তার সম্মান ও আভিজাত্য। সমাদর পায় সব মানুষের কাছে। তাই লজ্জাশীলতার চাদর প্রত্যেকটি নারীর গায়ে যথাযথভাবে থাকা উচিত। এখানে নারীর লজ্জা ও লাজুকতা নিয়ে কোরআন হাদিসের সংক্ষিপ্ত কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হলো।

কোরআনে নারীকে লজ্জার প্রতি উৎসাহ : মানুষ জন্মগতভাবে লাজুক। চাই সে নারী হোক কিংবা পুরুষ। আদমণ্ডহাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর, সে তাদের প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজদের ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদের ডাকলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের ওই গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু? (সুরা আরাফ : ২২) সাধারণত পুরুষদের চেয়ে একজন নারীর লজ্জা বেশি। হজরত মুসা (আ.) এর সঙ্গে হজরত শুয়াইব (আ.) এর মেয়েদের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে, কিছুক্ষণ পর সেই দুই নারীর একজন লাজুক ভঙ্গিমায় হেঁটে হেঁটে তার কাছে এলো। সে বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। (সুরা কাসাস : ২৫)। এ আয়াতে নারীদের লজ্জাশীলতার প্রমাণ পাওয়া গেল। আর এজন্যই তো সমাজে বলা হয় লজ্জা নারীর ভূষণ বা অলংকার। উল্লেখ্য, এখানে মেয়েটি মুসা (আ.)-এর পেছনে পেছনে চলেছিল। সামনে হাঁটেনি। যাতে পর্দা লঙ্ঘন না হয়। লজ্জাহীনতা প্রকাশ না পায়।

লজ্জা ঈমানের অঙ্গ : লজ্জা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এর মাধ্যমে একজন নারীর ঈমান সহজেই পূর্ণ হয়। মজবুত দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। অথবা ষাটটির কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। (মুসলিম : ৫৯)। লজ্জাহীন রূপ সৌন্দর্যের অধিকারী নারী সাময়িক কারো চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে। প্রয়োজন শেষে কলার খোসার মতো তাকে ডাস্টবিনে ফেলতে কেউ দ্বিধা করে না। কিন্তু লজ্জাশীল নারীর কদর সর্বত্র। দুনিয়াতেই তার জীবন শান্তি সুখের সৌরভে ভরে ওঠে। সর্বোপরি জান্নাতে হয়ে যায় চিরস্থায়ী ঠিকানা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন লজ্জা-সম্ভ্রম হলো ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হলো দুর্ব্যবহারের অঙ্গ। আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারী) জায়গা জাহান্নামে। ( তিরমিজি: ২০০৯)।

যে ক্ষেত্রে লজ্জা নিন্দনীয় : সত্য প্রকাশ এবং জ্ঞান-অন্বেষণে নারীদের লজ্জা করা ঠিক নয় । লজ্জার দোহাই দিয়ে নারীদের একান্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা থেকে বিরত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আনসারী নারীদের প্রশংসা করে বলেন, আনসারী নারীরা কতইনা উত্তম! লজ্জা কখনো তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না। (মুসলিম : ৭৭২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যাধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তবুও তিনি নারীদের প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা আল্লাহর রাসুল (সা.) কে হায়েজের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তাকে গোসলের নিয়ম বলে দিলেন যে, এক টুকরো কস্তুরি লাগানো নেকড়া দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করো। মহিলা বললেন, কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করব? রাসুল (সা.) বললেন, তা দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করো। মহিলা (তৃতীয়বার) বললেন, কীভাবে ? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুবহানাল্লাহ! তা দিয়ে তুমি পবিত্রতা হাসিল করো। আয়েশা (রা.) বলেন, তখন আমি তাকে টেনে আমার কাছে নিয়ে এলাম এবং বললাম, তা দিয়ে রক্তের চিহ্ন বিশেষভাবে মুছে ফেল।? (বোখারি: ৩১৪)।

নারীর লজ্জা জরুরি কেন ? : আজকাল অধিকাংশ মানুষ লজ্জা কাকে বলে এটাই ভুলে গেছে। এর ফলে সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে বেহায়াপনা। কালের স্রোতে ভেসে যাওয়া নারীদের অশ্লীলতায় ধ্বংস হচ্ছে যুব সম্প্রদায়। ভেঙ্গে পড়ছে সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা। এ সবকিছুই হচ্ছে লজ্জা না থাকার কারণে। আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পূর্ববর্তী নবীদের নাসিহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না করো তবে যা ইচ্ছা তাই করো। (বোখারি : ৬১২০)। অতএব, বুঝা গেল লজ্জা থাকলেই নারী নিজে ভালো থাকবে এবং সমাজকে সুস্থ রাখবে। যার লজ্জা নেই সে ভালো-মন্দ সবকিছু করে বেড়ায়। পরিণামে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হয়। এছাড়াও আরো দুটো কারণে নারীদের লজ্জা থাকা জরুরি।

এক. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাক যখন কোন বান্দার ওপর কোনো সম্পদ দান করেন, তখন তিনি তার চিহ্ন ওই বান্দার ওপর প্রকাশ পাওয়া পছন্দ করেন। তিনি অভাব ও দীনতা প্রকাশ করাকে অপছন্দ করেন। নাছোড়-বান্দা হয়ে ভিক্ষাকারীকে ঘৃণা করেন এবং লজ্জাশীল ও ভিক্ষা করে না এমন পবিত্র মানুষকে তিনি ভালোবাসেন। (জামেউস সগির : ১৬৬২)।

দুই. নিজের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করার জন্য। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোনো বস্তুর শুধুমাত্র কদর্যতাই বাড়িয়ে দেয়। আর লজ্জা কোনো জিনিসের সৌন্দর্যতাই বাড়িয়ে দেয়। (তিরমিজি: ১৯৭৪)।

লেখক: কবি ও শিক্ষক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত