ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই

শাহাদাত হোসাইন
বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই

মানবসেবা পরম ধর্ম। অন্যের কল্যাণ কামনা ও পরোপকার্থে নিবেদিত মানুষই প্রকৃত মানুষ। মানুষের জীবনে সুখ আসে। দুঃখ আসে। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, এগিয়ে আসা এটাই মানবতা। মনুষ্যত্বের প্রকাশ। মানুষের জীবনে আসমানি পরীক্ষা আসে এবং তা থেকে উত্তরণের পথও আছে। সুরা বাকারায় এসেছে, আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের (১৫৫)। বন্যা এমন একটি মসিবত ও দুর্যোগ যা মানুষকে আয়াতে উল্লেখিত সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও মসিবতের সম্মুখীন করে। এই ক্ষয়ক্ষতি ও মসিবত কাটিয়ে উঠতে অন্যান্যদের উচিত বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।

আল্লাহর দয়ায় সিক্ত হই : আল্লাহতায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকুলকে ভালোবাসেন। বিশেষত মানুষকে। তিনি চান মানুষ পরস্পরের প্রতি দয়াশীল হোক। তারা একে-অন্যের বিপদে এগিয়ে আসুক। সাহায্য করুক। হাদিসে এসেছে, দয়ালুদের প্রতি দয়াময় আল্লাহ দয়া করেন। তুমি পৃথিবীর বাসিন্দাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আসমানের অধিপতি তোমার প্রতি দয়া করবেন (মুজামুল-আওসাত:১৩৮৪)। আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের সাহায্য করে নিজেও আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়াপ্রাপ্ত হতে হবে।

অন্যের বিপদে ছুটে যাই : পৃথিবীতে যারা অন্যকে বিপদমুক্ত করবে। অন্যের জীবন রক্ষায় সাহায্য করবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের বিপদমুক্ত করবেন। নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের দুনিয়ার সমস্যা দূর করবে আল্লাহ তার আখেরাতের সমস্যা দূর করবেন (মুসলিম:২৬৯৯)। স্বয়ং আল্লাহ যার সাহায্যে এগিয়ে আসবেন তার মতো সৌভাগ্যশীল আর কে আছেন? তাই অন্যের বিপদে ছুটে গেলে পরোক্ষভাবে নিজেকেই দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির উপযুক্ত করা হয়।

আল্লাহর হেফাজতে থাকার সৌভাগ্য লাভ : বন্যাকবলিত অঞ্চলের লোকেরা খাবার পানীয় ইত্যাদির পাশাপাশি বস্ত্র অভাবে থাকবেন। এই সময়ে বস্ত্র দিয়ে যারা তাদের পাশে থাকবেন। তারা মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকবেন। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদানের ব্যাপারে নবীজি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে বস্ত্রদান করবে সে ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকবে, যতদিন তার দেয়া বস্ত্র ওই ব্যক্তির পরিধেয় হিসেবে গায়ে থাকবে (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব:৩:১৫১)।

আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যম : সাহাবি আবু হোরায়রাহ (রা.) নবীজি থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুমিনকে চিন্তা বা দুর্দশামুক্ত করব, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে সেই ব্যক্তিকে দুর্দশামুক্ত করবেন। আর যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত কোনো ব্যক্তির ওপর সহজতা করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাত সহজ করে দিবেন। আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করেন (মুসলিম:২৬৯৯)। আল্লাহর সাহায্য পেতে বন্যার্ত মানুষের সাহায্য করি।

সে মোমেন নয় : যার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পাশের কষ্ট জর্জরিত ব্যক্তিকে সাহায্য করে না। সৃষ্টিজীবের প্রতি অন্তরে দয়া উদ্রেগ হয় না। সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়ায় না। সে প্রকৃত মোমেন নয়। নবীজি বলেছেন, সেই ব্যক্তি মোমেন নয়, যে পরিতৃপ্ত হয় আর তার পার্শ্বেই প্রতিবেশী অনাহারে থাকে (মিশকাত:৪৯৯১)। বিষয়টি শুধু খাবারের সাথেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোনো সমস্যাই এর আওতাভুক্ত। কোন ব্যক্তি অসুখ-বিসুখ, পেরেশানি-কষ্টে ডুবে আছে আর আপনার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চুপ আছেন। সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন না। তাহলে, নবীজির কথামত আপনি প্রকৃত মোমেন না।

মায়াহীন ব্যক্তি আল্লাহর দয়াবঞ্চিত : কিছু মানুষ এমন আছেন যাদের অন্তরের মধ্যে দয়া-মায়ার চিহ্ন অবধি নেই। কোনো মানুষ বা প্রাণীর কষ্ট তাদের কঠিন হৃদয়ে দয়ার ঝড় আনতে পারে না। অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করার কোনো ইচ্ছা তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয় না। এরা বড়ই হতভাগ্য। নবীজি বলেছেন, শুধুমাত্র দুর্ভাগা থেকেই দয়া-অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেয়া হয় (তিরমিজি:১৯২৩)। ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া না করে নিজেকেই দয়াবঞ্চিত করে। হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করেন না (মুসলিম:২৩১৯)।

কেয়ামতের দিন আল্লাহর আহ্বান : নবীজি বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা সমবেত সকল মানুষের উদ্দেশে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের কাছে খাবার চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা আমাকে খাওয়াওনি (যাদুল-মুইয়াসসার:১৭৩)। অথচ আল্লাহর খাবারের প্রয়োজন নেই। এর উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়াতে আমার অনেক সৃষ্টিজীব না খেয়ে অনাহারে দিনাতিপাত করেছে। তারা তোমাদের কাছে খাদ্য চেয়েছিল কিন্তু তোমরা তাদেরকে খাবার দাওনি। আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে খাওয়ানো আল্লাহকে খাওয়ানোর মতোই। আসুন, সাহায্য নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই, আল্লাহ কর্তৃক নানাবিধ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি।

লেখক: খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ রংপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত