পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সুরা যারিয়াত : ৫৬)। ইবাদতের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমানভাবে আদিষ্ট। বিশুদ্ধ নিয়মে ইবাদত করার জন্য ইলম শিক্ষা করা নারী-পুরুষ সবার উপর অপরিহার্য। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ইলম শিক্ষা করা প্রতিটি মানুষের উপর ফরজ। (ইবনে মাজাহ : ২২৪) নারীদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের বিষয়টি কোরআন থেকেও প্রমাণিত হয়। বর্ণিত হয়েছে, হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং আপন পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সুরা তাহরীম : ৬)। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ইবাদত বন্দেগি করতে হবে। আর ইবাদত বন্দেগির জন্য ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের সকল বিদ্যা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী কারিম (সা.) আমার নিকট আসেন, যখন আমি হাফসা (রা.)-এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেন, তুমি তাকে কেন নামলা (এক প্রকার রোগ সারার মন্ত্র) শিখাও না, যেমন তুমি তাকে লেখা শিখিয়েছো? (আবু দাউদ : ৩৮৪৭)।
নারীদের নিরাপদ শিক্ষাকেন্দ্র : নারী-পুরুষের আবেগ, অনুভূতি ও চাহিদার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক কারণে নারীদের শিক্ষা কেন্দ্র আলাদা হওয়া প্রয়োজন। যেসব প্রতিষ্ঠানে শুধু মেয়েরা লেখাপড়া করে, সেটাই নারীদের নিরাপদ শিক্ষাকেন্দ্র। তবে শর্ত হলো ওইসব প্রতিষ্ঠানে কোনো পুরুষ শিক্ষক থাকতে পারবে না। বরং পুরোটাই মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ছেলে ও মেয়ে একত্রে একই ক্যাম্পাসে, একই ক্লাসরুমে পড়াশোনা করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা জায়েজ নয়। এ ব্যাপারে আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত হলো- বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্রছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা, এটি ফেতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের সতরের কোনো অংশ খোলা রাখে কিংবা অন্যের সামনে পিনপিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক আঁটসাঁট জামা পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে; যা সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা: ১৭/৫৩) সুতরাং ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়ার প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। নারীদের সর্বোত্তম শিক্ষাকেন্দ্র হলো? মহিলা মাদ্রাসা। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে অসংখ্য মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী সিলেবাস ও বিজ্ঞ আলেমদের অধীনে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হলে শিক্ষা দীক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
নারীদের তালিম তরবিয়ত : বর্তমান এই আধুনিক যুগে অধিকাংশ পরিবারে পশ্চিমা ভাবধারা প্রবেশ করেছে। অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক সুব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতি সংস্কৃতিতে ভিন্ন আঙিকে উপস্থাপনের প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রত্যেকটি মুসলিম পরিবারে ঘরোয়া তালিম তরবিয়তের প্রয়োজনীয়তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফিতনা-ফ্যাসাদের এই যুগে পুরুষদের এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। তারা নিজেরা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ঘরের ভেতরে তালিম তরবিয়তের সুব্যবস্থা করতে পারেন। শিক্ষা দীক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারেন। নারীদের উপযোগী বিখ্যাত আলেমদের লেখা কিতাবপত্র সংগ্রহ করে দিতে পারেন। অন্তত সপ্তাহে একদিন ঘরে ফাজায়েলে জিন্দেগী, আহকামুন নিসা ও ফাজায়েলে আমাল ইত্যাদি কিতাবি তালিমের আয়োজন করতে পারেন। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, মহিলারা একবার নবী কারিম (সা.) কে বলল, পুরুষরা আপনার কাছে আমাদের চাইতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি নিজে আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করে দিন। তিনি তাদের বিশেষ একটি দিনের ওয়াদা করলেন। সে দিন তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাদের ওয়াজ নসীহত করলেন ও নির্দেশ দিলেন। (বোখারি : ১০১)। নারীদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও তালিম তরবিয়তের চর্চা অব্যাহত থাকলে আগামী প্রজন্ম সহজেই ইসলামিক ধাঁচে গড়ে উঠবে। ইসলামের সোনালি যুগের নারীরা শিক্ষা দীক্ষাসহ যাবতীয় বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। আয়েশা (রা.)-এর কাছে বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম জটিল ও কঠিন সমস্যালির সমাধান পেয়ে যেতেন।
আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণের যখনই কোন হাদীসের মর্ম সম্বন্ধে জটিলতা দেখা দিয়েছে আর সে বিষয়ে আমরা আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেছি, তখনই তার কাছে আমরা এ বিষয়ে জ্ঞান পেয়েছি। (তিরমিজি : ৩৮৮৩)। সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের তালিম তরবিয়তের দোহাই দিয়ে প্রকাশ্য মাঠে ময়দানে ডেকে এনে সম্মেলন করা এবং কোথাও কোথাও নারী বক্তা দ্বারা বয়ান করার রেওয়াজ চালু হয়েছে। উক্ত তালিম তরবিয়াতের জলসাগুলো সাহাবা-তাবেয়ীনের অনুসৃত তরিকা পরিপন্থি। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এ ব্যাপারে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।