ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচার আমল

শরিফ আহমাদ
শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচার আমল

শয়তান মানুষের শত্রু। তার শয়তান হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল আল্লাহর আদেশ অমান্য করা। আল্লাহতায়ালা যখন আদম (আ.) কে তৈরি করে সম্মানসূচক সেজদা করার হুকুম দিয়েছিলেন, তখন সে অহংকার করে সেজদা করেনি। এজন্যই সে চির অভিশপ্ত হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সেজদা করো। তখন তারা সেজদা করল। তবে ইবলিস করল না। সে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো। (সুরা বাকারা : ৩৪)।

অভিশপ্ত হওয়ার পর থেকেই তার মূল টার্গেট হলো মানুষকে দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত করা। পাপের প্রতি উৎসাহিত করা। কোরআন ও হাদিসে শয়তানের পরিচয়, কর্মকাণ্ড এবং তার প্রতারণা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। এ নিবন্ধে শয়তানের প্রতারণা ও তা থেকে বাঁচার কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো।

শয়তানের কার্যক্রমের বিবরণ : শয়তান মানবদেহে রক্তের মতো চলাচল করতে পারে। তাই সে মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতারণা করে। কখনো সরাসরি মানুষকে শিরক-কুফরির দিকে আহ্বান করে। আবার কখনো ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার জন্য সূক্ষ্ম প্রলোভন দেয়। মানুষ ও ক্ষেত্র বুঝে নিত্য কৌশল ও বিরল কৌশল প্রয়োগ করে। এ কাজে সে তার সহযোগিদের পুরস্কার প্রদান করে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইবলিস পানির উপর তার আরশ স্থাপন করে তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সে, যে সর্বাধিক ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সাথে আমি সকল প্রকার ধোঁকার আচরণই করেছি। এমনকি তার থেকে তার স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত আমি তাকে ছেড়ে দেইনি। অতঃপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হ্যাঁ, তুমি একটি বড় কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। (মুসলিম : ৬৮৪৬)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে এ বস্তুকে কে সৃষ্টি করেছে? ওই বস্তুকে কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এই স্তরে পৌঁছে যাবে, তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়। (বোখারি: ৩২৭৬)।

প্রতারণা থেকে বাঁচার আমল :

এক. শয়তান যত ধূর্ত এবং শত্রু হোক না কেন ঈমানের দৃঢ়তা, আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা, ইবাদত-বন্দেগি ও নেককার লোকের সঙ্গ অবলম্বন করে শয়তানের প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব। হাদিসে বর্ণিত পাঁচটি আমল এখানে উল্লেখ করা হলো। এক. ঈমান বিষয়ক প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রজীম পড়তে হয়।

দুই. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠের মাধ্যমে শয়তানের শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আবু মালিহ (রহ.) একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, আমি নবী করীম (সা.)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে সাওয়ার ছিলাম। এমন সময় উটটি লাফালাফি করতে থাকলে আমি বলি, শয়তানের সর্বনাশ হোক! তখন নবী (সা.) বললেন, তুমি এরূপ বলো না যে, শয়তানের সর্বনাশ হোক! কারণ, তুমি যখন এরূপ বলবে, তখন শয়তান অহংকারে ফুলে যায়। আর বলে, আমি খুবই শক্তিমান। বরং তুমি বিসমিল্লাহ বলো। যখন তুমি এরকম বলবে, তখন শয়তান ছোট মাছির মতো (দুর্বল) হয়ে যায়। ( আবু দাউদ : ৪৯৮২)।

তিন. নামাজের মধ্যে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য বামদিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপের মতো ভাব করতে হয়। উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার এবং আমার সালাত ও কেরাতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে তা আমার জন্য এলোমেলো করে দেয়। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ওটা এক (প্রকারের) শয়তান, যার নাম খিনজিব। যখন তুমি তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন (আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার কবল থেকে আল্লাহর নামে আশ্রয় নিয়ে তিনবার তোমার বাম দিকে থুতু নিক্ষেপ করবে। তিনি বলেন, পরে আমি তা করলে আল্লাহ আমার থেকে সেটা দূর করে দিলেন। (মুসলিম : ৪০৮৩)।

চার. জিকিরের মাধ্যমে শয়তান পরাজিত হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শয়তান আদম সন্তানের কলবের বা অন্তরের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে, তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয়, তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস ওয়াসা দিতে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবিহ :২২৮১)।

পাঁচ. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন নামাজের জন্য আজান দেয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, সে কয় রাকাত নামাজ আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। (বোখারি : ৫৮১)।

লেখক : শিক্ষক ও খতিব

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত