কোরআন খোদাতালার অমূল্য দান। তিনি স্বীয় কালাম পাক মানবের উপর অবতীর্ণ করিয়া পৃথিবীকে ধন্য করিয়াছেন। অজ্ঞ মানব ইহার মূল্য নিরূপণ করিতে অক্ষম। যুগে যুগে মানবের হেদায়েতের জন্য দয়াময় তাহার আজ্ঞা প্রচার করিয়াছেন বটে, কিন্তু তাহার পুরোনো আদেশ তাহার সর্বশ্রেষ্ঠ হাবিব হজরত রাছুলুল্লাহর উপর কোরআনের আকারে অবতীর্ণ হইয়াছিল। ইহা পূর্ববর্তী আদেশ সমূহের পরিপূরক। কোরআনের আদেশবাণী প্রতিপালন করিলে মানব অক্ষয় ধনের অধিকারী হইতে পারে। ইহা একদিক্রমে ধর্ম্মনীতি, সমাজনীতি, শাসননীতি, শিক্ষানীতি ও বৈষয়িক বিধান। ইহার প্রতি অক্ষর, প্রতি শব্দ, প্রতি পংক্তি, অদ্বৈতবাদের অভিব্যক্তি। ইহা ধর্ম্মশাস্ত্র ও দর্শনশাস্ত্রের বিরাট সমন্বয়। ইহার বাক্যনিচয় অকাট্য যুক্তিপূর্ণ। ইহা অতীত, বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ রহস্যের সমাধান। কোরআন স্ত্রী পুরুষের সমাধিকার বজ্রনির্ঘোষ প্রচার করিয়াছে। স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, দূর ও নিকট আত্মীয়ের দায়ভাগ অতি সুন্দররূপে নির্দ্ধারিত করিয়াছে। ইহা জটিল বিবাহ সমস্যার সমাধান করিয়া সংসার ক্ষেত্রের অনাচার, দুর্নীতি হ্রাস করিয়াছে। ইহা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের পার্থিব জীবন সুনিয়ন্ত্রিত করিয়াছে। কোরআন সর্ব্ব ব্যধির প্রতিষেধক। ইহা কলেরা, বসন্ত, মস্তিষ্ক বিকৃতি প্রভৃতি উৎকট রোগের মহৌষধ। ইহা ভূত প্রেত ও জিন্নাতের অমোঘ দাওয়া। ইহার মধ্যে এরূপ গুপ্ত বস্তু নিহিত আছে, যাহার সাহায্যে অলৌকিক ব্যাপার সমাধা হয়, বহু কূট রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায়। ইহার সাহায্যে কঠিন কঠিন মুছিবত হইতে মানুষ পরিত্রাণ লাভ করে ও পরজগতের মুক্ত আত্মার সন্ধান পায়। মোটকথা, এমন কোন বস্তু নাই যাহা কোরআন পাকের সাহায্যে সাধন করা অসাধ্য। যাহারা সন্ধান পাইয়াছেন তাহারাই ধন্য। কোরআনের সাহায্যে মানব এই দুনিয়াতে স্বর্গীয় শান্তি উপভোগ করিতে সমর্থ হয়। ইহাতে অগণিত অমূল্য রত্ন লুক্কায়িত আছে। যাহারা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করিয়াছেন তাহারাই ইহার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন। কোরআন অদ্বৈতবাদের মুখ্য আখ্যান। ইহার প্রথম ছুরাই সমগ্র কোরআনের অভিব্যক্তি। নামাজের প্রতি রাকাতে ইহা আবৃত্তি করিতে হয় এবং ইহার ওপর অকাট্য বিশ্বাস স্থাপন করিলে মানব প্রকৃত আনন্দ লাভ করিতে পারে। আয়াতুল কুরসি ও ছুরা ইখলাস খোদাতায়ালার একত্ব ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করিতেছে। সমস্ত ছুরার মধ্যে ইহাদের স্থান অতি উচ্চ। ইহাদের সাহায্যে সাধক অনেক অসাধ্য সাধন করিতে পারেন। দুঃখের বিষয়, বর্তমান যুগে মুছলমান কোরআন শরীফের সম্মান ও মর্যাদা ক্রমে ভুলিয়া যাইতেছে এবং তৎসহ উহাদের দ্রুত অবনতি সংঘটিত হইতেছে। এখনো যদি খোদাতায়ালার অস্তিত্বে সম্পূর্ণ বিশ্বাস না জন্মে, এখনো যদি তাহার অপার্থিব দানের প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি না জন্মে, এখনো যদি খোদাতায়ালার শ্রেষ্ঠ হাবিব মহামানব হজরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মহাব্বত না জন্মে, তবে মোছলেমের তরক্কী সুদূরপরাহত। (তরীকত শিক্ষা : ১৫-১৬)। [বি.দ্র. লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে। ]