শীত আল্লাহর অপরূপ এক উপহার। শীত ইবাদতের মৌসুম। এ মৌসুমে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের নির্দেশ। উন্নত চরিত্র ও মানবতার দাবি। ইসলাম মানব জাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, সঠিক পথের দিশারী। ইসলাম সর্বদা পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও মানবিকতার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, অসহায়দের সাহায্য করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।
শীতকাল দরিদ্র ও নিঃস্ব মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টের। শীতের প্রকোপ তাদের দুর্ভোগকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। যে শীতের কষ্ট অনুভব করেনি, তাকে কোনোভাবেই বোঝানো সম্ভব না; শীতের কষ্ট কী জিনিস। এ অবস্থায় দরিদ্রদের সাহায্য করা শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ইবাদত। মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। আল্লাহকে খুশি করার মহান এক সুযোগ। কোরআন ও হাদিসে বারবার দান-সদকার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ইসলাম দানশীলতা ও মানবতার শিক্ষা দেয়। শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য উষ্ণতার ব্যবস্থা করা সেই মানবতার বাস্তব প্রতিফলন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাদের দান করো আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যে সম্পদ আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন।’ (সুরা নুর: ৩৩)।
এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, ধন-সম্পদ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত। তিনি তা আমাদের পরীক্ষা করার জন্য দিয়েছেন। আমাদের দেয়া এ সম্পদে অন্যের হকও রয়েছে। বিশেষ করে গরিব, মিসকিন ও অভাবগ্রস্তদের জন্য সেই সম্পদ ব্যয় করতে বলা হয়েছে।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ : ১৬৮২)।
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, অন্যের প্রয়োজন পূরণ করা একটি বড় ইবাদত। এটি মানবতার চেতনা জাগিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি প্রসারিত করে। যারা দান করে, আল্লাহ তাদের জান্নাতে মর্যাদা ও পুরস্কার দান করবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মোমেন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা চায়, অন্য ভাইয়ের জন্যও তা চায়।’ (বোখারি : ১৩)। নবীজি (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মোমেনের দুনিয়ার কষ্ট দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)।
শীতার্তদের সাহায্য করা কেন জরুরি? শীতকাল গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য চরম কষ্টের সময়। তাদের জন্য কাপড়, কম্বল, গরম খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হয়। এটি ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করে। এ হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। কনকনে শীতে বস্ত্রহীন, অন্যহীন গরিব দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। গরিব ও অসহায়দের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে তাদের দুয়ারে হাজির হওয়াই আমাদের কর্তব্য।
এছাড়াও আমরা শীতার্তদের সাহায্যে ফান্ড সংগ্রহ করতে পারি। প্রয়োজনমতো গরম খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারি। এমনভাবে দান করা যাতে তাদের মর্যাদাহানি না ঘটে। শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের মানবিক শিক্ষা ও আদর্শেরই অংশ।
এটি শুধু ইবাদতই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের দায়িত্বও। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রহম করো পৃথিবীর লোকদের প্রতি, আসমানের মালিক তোমাদের প্রতি রহম করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯২৪)। অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটালে আল্লাহ জান্নাতে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের শীতার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসার তৌফিক দান করুন।
লেখক : তরুণ আলেম ও সাংবাদিক