ঢাকা ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতারণার পরিণাম

জুবাইর ইসলাম মাবরুর
প্রতারণার পরিণাম

দিন দিন প্রতারণা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণা একটি পেশায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান সমাজে কথার ছলে অন্যের ক্ষতি করা মানুষজনের সংখ্যা অনেক। প্রতারকের মুখের ভাষা সুমিষ্ট। বাহ্য আচার-আচরণ মার্জিত। মুখের ভাষা দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে প্রতারক। একটু বিশ্বাস জন্মালে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, কখন কীভাবে মানুষকে ঠকানো যায় এ মানসিকতার লোককেই সাধারণত প্রতারক বলা হয়। প্রতারণা করা কবিরা গোনাহ। যে প্রতারণা করে সে পাপী। প্রতারণাকারী দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত। দুনিয়ায় কেউ তাকে সম্মান করে না। কারো কাছে শ্রদ্ধাভক্তি পায় না। আখেরাতে আল্লাহ পাকও তার সঙ্গে সদয় আচরণ করবেন না। তবে প্রতারণা করে যাদের ক্ষতি করা হয় আল্লাহতায়ালা পরকালে তাদের বিশেষ প্রতিদান দেবেন। কিন্তু প্রতারকদের জন্য রয়েছে শাস্তির হুঁশিয়ারি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘...অতঃপর যে কেউ ওয়াদা ভঙ্গ করলে তার ওয়াদা ভঙ্গের পরিণাম বর্তাবে তারই ওপর। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবে অচিরেই আল্লাহ তাকে মহা পুরস্কার দেবেন।’ (সুরা ফাতহ : ১০)।

প্রতারক সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, প্রতারণাকারী ও ধোঁকাবাজদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’ (তিরমিজি:১৩১৫)। অপর এক হাদিসে তিনি বলেন, যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, সে আমাদের লোক নয় এবং যেকেউ আমাদের প্রতারিত করবে, সে-ও আমাদের লোক নয়। (মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বাজারে খাদ্যশস্যের স্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এর ভেতরে হাত ঢোকালেন এবং অনুভব করলেন ভেজা ভেজা ভাব। অথচ স্তূপটির বাইরের দিক ছিল শুকনা। তিনি এই পণ্যের মালিককে জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এই শস্য বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। নবী (সা.) তাকে বললেন, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যশস্য কেন স্তূপের ওপরের দিকে রাখোনি? তা হলে লোকজন তা দেখতে পেত। যে প্রতারক, সে তো আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)। উপরের হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায়, প্রতারণা করা একটি ঘৃণিত ও বর্জনীয় কাজ। প্রতারণাকারীকে রাসুল (সা.) পছন্দ করেন না। সে মুসলিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন প্রিয়নবী (সা.)।

অন্যের ক্ষতি করে প্রতারক আত্মপ্রবঞ্চনায় ভুগলেও সে মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা আল্লাহ ও মোমেনদের প্রতারিত করে, আসলে তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না; কিন্তু এটা তারা উপলব্ধি করতে পারে না।’ (সুরা বাকারা : ৯)। প্রতারকদের পরকাল হবে কষ্ট ও যাতনার। তারা নানান শাস্তির সম্মুখীন হবে। সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো তারা আখেরাতে হবে নিঃস্ব। প্রতারণা করে দুনিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও আখেরাতে হবে অত্যন্ত গরিব। নেকিশূন্য ভীষণ অপরাধীন হয়ে হাজির হবে রবের সামনে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) সাহাবাদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে নিঃস্ব গরিব?’ সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! যার কোনো টাকা-পয়সা নেই।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। প্রকৃত গরিব ওই ব্যক্তি, যে কেয়ামতে পাহাড়সম নেকি নিয়ে উঠবে; কিন্তু সে জাহান্নামে যাবে। কারণ সে দুনিয়ায় কাউকে গালি দিয়েছিল, প্রতারণা করেছিল, অন্যের হক নষ্ট করেছিল ইত্যাদি।

কেয়ামতের মাঠে ওইসব লোক তার কাছে পাওনা দাবি করবে। বিনিময়ে সে নিজের সব নেকি দিতে বাধ্য হবে। নেকি শেষ হলে তার কাছে দেয়ার মতো আর কিছু থাকবে না। তখন সে পাওনাদারদের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম : ৬৩৪৩)। অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক প্রতারকের জন্য কেয়ামতের দিন তার (নিতম্বের) ওপর একটি পতাকা থাকবে। আর পতাকা বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। সাবধান! জনগণের শাসক হয়েও যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় প্রতারক আর কেউ নেই।’ (মুসলিম: ৪৩৮৮)। কাজেই আমাদের কর্তব্য হলো, প্রতারণা না করে মানুষের সঙ্গে ইনসাফভিত্তিক আচরণ করে দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করা। অন্যের ক্ষতি না করে পারলে অন্যের উপকার করা। এ মানসিকতা থাকলে কেউ কখনো অন্যের ক্ষতি করতে পারে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত