ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈদের ইতিহাস : ফজিলত ও করণীয়

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
ঈদের ইতিহাস : ফজিলত ও করণীয়

দীর্ঘ একমাস পবিত্র মাহে রমজানের রোজা পালন শেষে পহেলা শাওয়ালে উদযাপিত ইসলামি উৎসবকে ঈদুল ফিতর বলে। উম্মতে মুহাম্মদিকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ বিশেষ যত নেয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো দুইটি ঈদ। এই দুটি দিন মুসলমানদের জন্য উৎসবের পাশাপাশি ইবাদতও।? আল্লাহতায়ালার বিধিনিষেধ মোতাবেক শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে উদ্?যাপিত মুসলমানদের উৎসবও ইবাদত। এটা আল্লাহর অশেষ দয়া ও মেহেরবানি যে, তিনি উৎসব পালনকেও ইবাদত হিসেবে গণ্য করে এর বিনিময় দান করবেন।

ঈদের ইতিহাস : মুসলমানরা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নামে দুটি দিবস কোত্থেকে কীভাবে পেলো, তা হাদিসের কিতাবসমূহে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) (হিজরত করে) মদিনায় এসে দেখেন তার অধিবাসীরা নির্দিষ্ট দুটি দিন খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিন কীসের? তারা বলল, জাহেলি যুগে আমরা এ দু-দিন খেলাধুলা করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, আল্লাহতায়ালা এ দুটি দিনের পরিবর্তে তোমাদের আরো উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন।’ (আবু দাউদ : ১১৩৪)। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, মদিনায় হিজরতের পর দুই ঈদের সূচনা হয়। তবে ইতিহাসের বইপত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে, দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম ঈদুল ফিতর পালিত হয়।

ঈদের দিনের ফজিলত : ঈদের দিন ও রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দিন ও রাতের বিভিন্ন ফজিলতের কথা হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো-

এক. এ দিন ও রাত আল্লাহতায়ালার নিকট সবিশেষ সম্মানিত। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত দিন হলো ঈদুল আজহা, অতঃপর ঈদুল ফিতর।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৯০৭৫)।

দুই. দুই ঈদের রাতে রাত জেগে ইবাদত করা। হজরত আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রাত জেগে ইবাদত করবে, সে ব্যক্তির অন্তর কেয়ামতের ভয়াবহ মুহূর্তেও মরবে না, যখন অন্যান্য মানুষের অন্তর মরে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ : ১৭৮২)।

তিন. ন্যায়পরায়ণতার জন্য বিখ্যাত খলিফা, বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) তার পক্ষ থেকে বসরায় নিযুক্ত গভর্নরের কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেন, ‘তুমি বছরের চারটি রাতের (ইবাদতের) প্রতি খুবই যত্নবান হবে। কেননা, এ রাতগুলোতে আল্লাহতায়ালা ভরপুর রহমত বর্ষণ করেন। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবেবরাত এবং রজব মাসের প্রথম রাত।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ : ২৪৮)।

চার. ঈদের দিন আল্লাহতায়ালা সবাইকে ক্ষমা করে দেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের সঙ্গে (রোজাদার নেককার) বান্দাদের বিষয়ে গর্ব করতে থাকেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! বলো তো সেই শ্রমিকের প্রতিদান কী হতে পারে, যে স্বীয় কাজ সম্পাদন করেছে? ফেরেশতারা বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে দিয়ে দেয়াই তার প্রতিদান। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের উপর আমার পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। আজ (ঈদের দিন) আমার নিকট দোয়ার ধ্বনি দিতে দিতে ঈদগাহে এসেছে। আমার ইজ্জত, সম্মান ও বড়ত্বের শপথ! আমি তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। অতঃপর বলেন, যাও (হে আমার বান্দারা) আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের গোনাহগুলো নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে।’ (শুআবুল ইমান : ৩৭১৭) ।

ঈদের পর করণীয় : দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা পালন করে পাপকাজ থেকে বিরত থাকার পর রমজানের পর পাপে লিপ্ত হওয়া যাবে না। তাহলে রমজানের রোজা, ইবাদত ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকার কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না।

হজরত কাব (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল আর পাশাপাশি এই প্রতিজ্ঞা করল যে, রমজানের পর কখনো আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে না, তাহলে সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি রোজা রাখার পাশাপাশি এই পরিকল্পনা করল যে, রমজানে তো পাপকাজে লিপ্ত হতে পারছি না, রোজার পর পাপকাজে লিপ্ত হব, তাহলে তার রোজা কখনো কবুল হবে না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালার নৈকট্যশীল হওয়ার জন্য রমজানে বান্দা যা যা আমল করে, রমজান অতিবাহিত হওয়ার কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায় না, বরং আমৃত্যু তা চালিয়ে যেতে হয়। (লাতায়িফুল মাআরিফ : ৩৯৫)।

শাওয়ালের ৬ রোজা : ঈদের পর আরেকটি করণীয় হলো, শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা। এর দ্বারা এক বছর নফল রোজা রাখার নেকি পাওয়া যায় বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজাগুলো রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে, সে ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখার নেকি পাবে।’ (মুসলিম : ১১৬৪)। শাওয়াল মাসের যেকোনো দিন এ ছয়টি রোজা রাখা যাবে। এক নাগাড়ে রাখতে চাইলে তাও পারবে। আবার একটি রেখে মাঝে বিরতি দিয়ে আবার আরেকটি রেখে এভাবেও ছয়টি রোজা পূর্ণ করার অবকাশ আছে। যুবক-যুবতী বা বৃদ্ধবৃদ্ধা সবাই ছয় রোজা রাখতে পারবে। এ রোজার জন্য বয়সের কোনো রীতিনীতি বা সীমাবদ্ধতা নেই।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত