অহংকার সব পাপের মূল। এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। সৃষ্টিজগতের প্রথম মানব আমাদের পিতা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ করেছিলেন- ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর।’ এই আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহতায়ালা যখন ফেরেশতাদের কাছে তার মানব-সৃষ্টির ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন, তখন তারা বলেছিল, ‘আপনি আমাদের রেখে এমন কোনো জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা নৈরাজ্য ঘটাবে, একে অন্যের রক্ত ঝরাবে, অথচ আমরা তো আপনার সার্বক্ষণিক ইবাদতে মগ্ন! মনে মনে তারা এও ভেবেছিল; আল্লাহতায়ালা কিছুতেই এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন না, যে আমাদের চেয়ে বেশি জানে এবং তার নিকট আমাদের তুলনায় অধিক সম্মানিত হবে। এসবের পরও ফেরেশতাদের যখন আল্লাহ বললেন, তোমরা আদমকে সিজদা কর, সকলেই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। এই তো ফেরেশতাদের পরিচয়-তাদের যা আদেশ করা হয় তারা তা-ই পালন করে। কিন্তু ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা শয়তান মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল। ‘সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা বাকারা : ৩৪)।
এটা প্রথম অহংকারের ইতিহাস। এ পাপের কারণে শয়তান অভিশপ্ত হয়, জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়। অতঃপর মানুষের শত্রুতার ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীতে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘সে (শয়তান) বলল, আপনি যেহেতু আমাকে পথচ্যুত করেছেন, তাই আমি অবশ্যই তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকব। এরপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না। (সুরা আরাফ : ১৬-১৭)।
অহংকার করে শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়। তারপর আদম সন্তানকে জাহান্নামি বানানোর জন্য শপথ করে। তার এ শপথের শক্তিতে সে কেয়ামত পর্যন্ত আদম সন্তানকে বিভ্রান্ত ও পথহারা করার চেষ্টা করবে। শয়তানের আজকের এ হীন কাজের মূলে ছিল একমাত্র অহংকার। এ অহংকার তাকে চির জাহান্নামি বানাল। তাই অহংকার সবচেয়ে ভয়ংকর আত্মিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
লেখিকা : শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, পদ্মা সরকারি কলেজ