মানুষ হতে হলে পশুত্বকে দূর করতে হবে কিংবা বশীভূত করতে হবে। ইন্দ্রিয়গুলোকে দমন করতে হবে। রিপুগুলোকে দমন করতে হবে। আর তা ছাড়া অন্তরেন্দ্রিয়কে দমন করতে হবে। আমরা আমাদের মধ্যে সকলেরই মধ্যে খোদী আছে, আমিত্ব আছে, অহমিকা আছে। যে পর্যন্ত আমরা অহমিকাকে বর্জন করতে না পারব সে পর্যন্ত খোদার দীদার লাভে এই দুনিয়ার বুকে সম্ভবপর হবে না। খোদার অনুগ্রহ পেতে হলে নিজেকে একেবারে লয় করে দিতে হবে। নিজের যেন মাত্র কোন প্রকার ফখর না থাকে। খোদার যত বান্দা আছে, যে জাতের হোক, যে ধর্মের হোক, যে স্থানের হোক, সকলকে সমভাবে খেদমত করা। আর তাদের খেদমত করলে খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি সাধিত হয়। দুঃখের বিষয়, আমরা মুছলমান মনে করি যে আমরাই সবকিছু।
খোদাওয়ান্দ কারিম যত বান্দা সৃষ্টি করেছেন, সকলের মধ্যে তার রূহ আছে, তারই শরীরের অংশ আছে। আমি যদি কোন বান্দাকে যদি একটু ঘৃণা করি তাহলে খোদাকেই ঘৃণা করা হয়। আপনার সন্তানকে যদি আমি ঘৃণা করি, তাহলে আপনাকে ঘৃণা করা হবে। দুঃখের বিষয় আমরা তা বুঝি না। সেই জন্য আমাদের চাই, খোদাকে পেতে হলে প্রথমে অহমিকাকে একেবারে ত্যাগ করতে হবে। ঘৃণাকে ত্যাগ করতে হবে। ঈর্ষাকে ত্যাগ করতে হবে। দ্বেষকে ত্যাগ করতে হবে। রীপুকে ত্যাগ করতে হবে।
আর সারা প্রাণটি দিয়ে খোদার বান্দার সেবা করতে হবে। তামাম পৃথিবীতে প্রকৃতি দেখুন, প্রকৃতির দিকে একবার চেয়ে দেখুন, একবার অনুধাবন করুন, প্রত্যেকটি গাছ প্রত্যেকটি পাতা, প্রত্যেকটি পাখি, প্রত্যেকটি পশু, প্রত্যেকটি কীট, প্রত্যেকটি খোদারই গুণকীর্তন করে। শেষ রাত্রি হলে তখন দেখুন, পাখীরা ডাকতে থাকে, পাখীরা যে খোদাকে ডাকে, তাদের নিজের প্রত্যেকের নিজের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ভাষা, আর সেই ভাষা দিয়ে খোদাকে ডাকে। আর মানুষ নিজের চিন্তায় এত গর্বিত শুয়ে থাকে। পাখীরা ডাকে, মোরগেরা ডাকে, উঠো খোদাকে ইয়াদ করো, ইবাদত করো, আর তারা ঘুমিয়ে নিদ্রায় থাকে। বড়ই আফসোসের কথা।
(লেখকের বানান হুবহু রাখা রয়েছে।)