নিজেকে পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ধারাবাহিক আমল ও আমলে বিশুদ্ধতা প্রয়োজন হয়। গোনাহ বর্জন ও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার নিয়ম জানতে হয়। এ জন্য বুজুর্গ আলেমগণ কোরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন সিলেবাস প্রণয়ন করেছেন। আত্মশুদ্ধির সিলেবাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরি- চাই সে ব্যক্তি কারো হাতে বাইয়াত গ্রহণ করুক কিংবা না করুক। আর যেসব লোক আল্লাহতায়ালার প্রেম এবং তাকে হাজির নাজির জানার উচ্চতম স্তর অর্জন করতে চায় তাদের জন্য এই প্রাথমিক সিলেবাস অপরিহার্য। হজরত শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) এর ধারায় বাইআত গ্রহণকারীদের জন্য একটি লিফলেট ছাপা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হলো একটি সাধারণ কর্ম তালিকা পেশ করা। এতে কিছুটা বর্ধন করে নম্বরওয়ারি সেগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে :
ঈমান ও আকিদা-বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও সংশোধন : আকিদা যদি ভ্রান্ত থাকে কিংবা কোন ধরনের বিশ্বাসগত শিরকের মধ্যে লিপ্ত থাকে, তাহলে সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এজন্য আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা বিশ্বাস জেনে নেওয়া জরুরি। এরপর পবিত্রতা, নামাজ, রোজা, ইসলামের স্তম্ভসমূহ, লেনদেনের অতি প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল, হালাল-হারাম, ফরজ ও ওয়াজিবসমূহও জেনে নেওয়া প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। উল্লিখিত বিষয়গুলো শিক্ষা করা নিতান্ত সহজ। তালিমুল ইসলাম, বেহেশতি জেওর ও মালাবুদ্দা মিনহু অল্প কিছুদিন অধ্যয়ন করার মাধ্যমেই এগুলোর শিক্ষা অর্জিত হতে পারে।
নিজের স্বভাব চরিত্র সংশোধন করা : মানুষের আত্মার পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত সংশোধন আল্লাহতায়ালার প্রেম এবং তাকে হাজির নাজির জানার অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পরই অর্জিত হয়। এ সময় আত্মলীনতা ও আত্ম বিলোপতা অর্জিত হয়ে যায়। কিন্তু ফরজ পর্যায়ের সংশোধন আমাদের ইচ্ছার আয়ত্তাধীন। কিন্তু নিজেদের আমলগুলো সংশোধন করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হলেও জরুরি। এর কর্মপন্থা হলো, উত্তম চরিত্র যেমন : বিনয়, নম্রতা, সহনশীলতা, দয়াশীলতা, স্নেহশীলতা, পরার্থপরতা, মহানুভবতা, ধৈর্যধারণ, অল্পেতুষ্টি ও অন্যের কল্যাণকামিতার দাবি অনুযায়ী মনোযোগের সঙ্গে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আমল করা। অনুরূপভাবে এগুলোর বিপরীত মন্দ কর্মসমূহ তথা অহংকার, ক্রোধ, কৃপণতা, লালসা, হিংসা ও স্বার্থপরতা ইত্যাদির দাবির বিপরীতে চলার জন্য দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে এবং ভালো কাজ সমূহের ফজিলত ও মন্দ কাজসমূহের অনিষ্টকর পরিণাম সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ’ অধ্যয়ন করে জেনে নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং নিজের সাহস ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অল্পকিছু দিন কষ্টসহকারে আল্লাহতায়ালাকে মনে রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এরপর অনুশীলন ও চেষ্টা প্রচেষ্টার মাধ্যমে মেজাজ এভাবেই গড়ে উঠবে। এ পন্থায় সফল হওয়ার সাক্ষ্য হাদিস শরিফে রয়েছে। একটি হাদিসে এসেছে :
‘যে ব্যক্তি কষ্টসহকারে চরিত্রশীলতার পন্থা অবলম্বন করবে আল্লাহতায়ালা তাকে চরিত্রশীল বানিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি সাহসিকতার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করবে আল্লাহতায়ালা তাকে ধৈর্য অবলম্বন করার তৌফিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি ক্লেশ সহকারে স্বনির্ভর থাকার পন্থা অবলম্বন করবে আল্লাহতায়ালা তাঁকে স্বনির্ভর বানিয়ে দেবেন।’ (বোখারি: ৬৪৭০)।
খাঁটি তওবা করা : খাঁটি তওবার তিনটি অংশ রয়েছে : ১. যেসব গুনাহ হতে তওবা করা হবে সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেওয়া। ২. ভবিষ্যতে এসব গোনাহের কাজ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। ৩. কৃত গোনাহের জন্য লজ্জা ও অনুতাপ প্রকাশ করা এবং নিজের সঙ্গে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া যে, ইনশাআল্লাহ আর কখনো এসব গুনাহ করব না। অতএব, আল্লাহতাআলার বিধি-বিধানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং জীবনের যে অংশ পাপাচার ও উদাসীনতায় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে তা হতে খাঁটি তওবা করে ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর নির্দেশাবলির ওপর চলা এবং ইবাদতময় জীবনযাপন করার দৃঢ় সংকল্প করা।