ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিশুর দুধদাঁতের যত্ন

শিশুর দুধদাঁতের যত্ন

শিশুর দাঁতের যত্ন নিতে হয় গর্ভকালীন প্রথম ৬ সপ্তাহ থেকে। এ সময়ে গর্ভের শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে গর্ভবতীর পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের অভাবে দাঁতের গঠন দুর্বল হয়ে যায়। পরে যত্ন নিলেও দাঁত সহজে নষ্ট হয়ে যায়। দাঁতের গঠন ও উজ্জ্বলতার জন্য গর্ভকালীন কোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এমনকি এ সময়ে অনেক চিকিৎসা গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে। গর্ভকালীন মাড়ির রোগ বা দাঁতের ব্যথা পুষে রাখলে গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। অনেকে মনে করেন, শিশুর দুধদাঁতের স্থায়ীত্বকাল কম বলে যত্নের প্রয়োজন নেই। গবেষণা বলছে, শিশুদের দুধদাঁতগুলো পড়ে যাওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যত্ন নিতে হবে। কারণ-

১. যথাযথ পুষ্টি পেতে: সুস্থ দাঁত খাদ্যকে উপযুক্ত চর্বণের মাধ্যমে হজমোপযোগী করে, খাবারের ইচ্ছা ও রুচিকে স্বাভাবিক রাখে।

২. স্থায়ী দাঁতের ওপর বিরূপ প্রভাব: দুধদাঁতের শিকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকে ক্ষতি করতে পারে। আবার স্থায়ী দাঁত এলোমেলো বা উঁচু-নিচু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ দুধদাঁত আগে বা পরে পড়া।

৩. স্পষ্ট উচ্চারণ ও মুখমণ্ডলের আকৃতি: স্বাভাবিক কথা বলা, কবিতা আবৃত্তি বা গান গাওয়া, চোয়ালের গঠন ও মুখের আকৃতি ঠিক রাখতে দুধদাঁতের সুস্থতা জরুরি। স্থায়ী দাঁতকে ঠিক স্থানে আনার দিকনির্দেশনাও দেয় দুধদাঁত।

৪. মানসিক বিকাশ: শিশুর মানসিক বিকাশ, স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশে অস্থায়ী দুধদাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৫. সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা: দীর্ঘমেয়াদি দাঁতের সংক্রমণ রক্ত বাহিকায় মিশে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে, যেমন- হার্ট, মস্তিষ্ক, হাড়। অন্যদিকে চোয়ালের হাঁড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

দাঁত ওঠার আগের সময়: সঠিক পরিচর্যার অভাবে ও অপুষ্ট শিশুর জিহ্বা, মাড়ি বা চোয়ালের অংশে ছত্রাক সংক্রমণ প্রায়ই দেখা যায়। এতে সাদা দইয়ের মতো প্রলেপ পড়ে, শিশু খেতে বিরক্ত করে ও কান্না করে। এ সমস্যা থেকে উপশম পেতে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখ পরিষ্কার, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। দাঁত ওঠার আগে অনেক বাচ্চা ‘টিথিং’ নামে ৭ থেকে ৮ দিনের জটিলতায় ভোগে। লক্ষণ হিসাবে বিরক্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মাড়ির ফোলাভাব বা প্রদাহ, লালা ঝরানো, ক্ষুধা কমে যাওয়া, মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, হালকা তাপমাত্রা, ডায়রিয়া, কামড় বেড়ে যাওয়া বা মাড়ি ঘষা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে মাড়ি ম্যাসাজ, সতর্কতার সঙ্গে ঠান্ডা কোনো ফল বা শক্ত খাবার চিবানোসহ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন অপরিষ্কার কিছু মুখে না দেয় বা কিছু খেয়ে না ফেলে।

অতিরিক্ত আঙুল চোষা রোধেও সচেতন থাকতে হবে। সাধারণভাবে ৬ মাসের দিকে, নিচের সামনের দাঁত ওঠা শুরু করলেও ক্ষেত্র বিশেষে বাচ্চা দাঁত নিয়ে জন্মাতে পারে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে তা ফেলে দিতে হয়। শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই, এতে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় অতিজরুরি উপাদান আছে। যেসব মায়েদের নিরুপায় হয়ে ফিডারে খাওয়াতে হয়, তাদের শিশুর মুখের যত্নে অধিক সচেতন হতে হবে। ফিডারে রাতে দুধ খাওয়ানোর সময় দুটি বোতল ব্যবহার করা উচিত। একটিতে দুধ ও অন্যটিতে পানি। কিছুক্ষণ পরপর দুধ ও পানি পরিবর্তন করে খাওয়ালে শিশুদের মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

এমনিতেই মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে এরা সক্রিয় হয়ে নানা রোগের সৃষ্টি করে। শিশুদের দাঁত ওঠার আগে টুথপেস্টের পরিবর্তে পরিষ্কার সুতি কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আঙুলে পেঁচিয়ে মাড়ি ও জিহ্বা নিয়মিত সকালে ও রাতে খাবার পর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত