দেওয়ালকে রীতিমতো ক্যানভাস বানিয়ে নিয়েছে চার বছর বয়সি প্রিয়ম। ভাড়া বাড়ির দেওয়ালজুড়ে নানা রঙের কারুকাজ। প্রিয়মের ভাবনার জগতের কত কিছুর যে ছড়াছড়ি ওখানে, তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে উদ্দাম আঁকিবুঁকি করে ভীষণ খুশি সে, আর মা-বাবার মাথায় হাত! ঘরের যা অবস্থা, তাতে বাড়িওয়ালার চোখরাঙানি হয়তো দেখতেই হয়।
কিন্তু ছোট্ট সোনামণির শিল্পচর্চায় বাধা দেওয়া কি ঠিক হবে? অ্যাস্থেটিক ইন্টেরিওরসের সিইও সাবিহা কুমু বললেন সে কথাই, শিশুদের নিরুৎসাহিত করাটা ঠিক হবে না, তাকে উৎসাহিত করতে হয়। ও যা কিছু হাতের কাছে পাবে, তাতে আঁকবে, এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। শিশুকে তার মতো করেই আঁকতে বা কোনো কিছু তৈরি করতে দিতে হবে। তা হলে ওর প্রতিভা, ওর নান্দনিকতা বিকশিত হবে।
কিন্তু বিপত্তি তো একটা বিষয়েই। এভাবে আঁকাআঁকির কারণে ঘরের দেওয়াল নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প পথ ভাবা ছাড়া উপায় নেই। মানে ‘ছিল রুমাল, বানাতে হবে বিড়াল’। এই অন্দরসজ্জাবিদের মতে, যাদের বাসায় শিশুর জন্য আলাদা ঘর আছে, তারা ওই ঘরেই একটা দেওয়াল শিশুকে ছেড়ে দিতে পারেন আঁকাআঁকি করার জন্য। তেমন ঘর না থাকলে শিশুরা কিছু কমন স্পেস, যেমন শোবার ঘর বা বসার ঘরের দেওয়াল নোংরা করে ফেলে। শিশুর জন্য ছেড়ে দেওয়া দেওয়ালটা লাল বা অন্য কোনো রং করে দেওয়া যায়। তারপর সেখানে আঁকলে আলাদা সৌন্দর্য তৈরি হবে। সাদা দেওয়ালে আঁকিবুঁকি যতটা খারাপ দেখায়, রঙিন দেওয়ালে ততটা লাগবে না।
এমনটা করতে না চাইলে শিশুর জন্য যতটুকু জায়গা বরাদ্দ করতে চান, তা বর্ডার করে দেওয়ার পরামর্শ সাবিহা কুমুর। তিনি বলেন, ওর আঁকার ওপর ডালপালা তৈরি করে নেওয়া যায় বা সেখানে ওর কিছু ছবি সেঁটে দেওয়া যায়। দেখে মনে হবে যেন ডালপালা থেকেই ছবিগুলো বেরিয়ে এল। একে নিতে পারেন পাখি কিংবা পাখির বাসা।
দেয়াল রঙিন করে পার্টেক্স বোর্ডের ওপরে সাদা অ্যাক্রেলিক শিট বসিয়ে কাঠের ফ্রেম করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়ার সমাধানও দিলেন তিনি। আরো বললেন, ‘সেটাই হবে ওর ফ্রেম। ওখানে সে আঁকবে। ওই দেওয়ালে মাছ, পাখি, ফুল এঁকে দিতে পারেন। এর সামনে এমনভাবে বোর্ডটা বসাতে পারেন, যেন শিশু বাগানে বসে আঁকছে, তেমন একটা আবহ তৈরি হয়।
তবে একেবারে খুব নোংরা করে ফেললে তো পুরো দেওয়াল রং করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন ওয়াল পেপার। শিশুর ঘরে কোনো কার্টুন চরিত্রের ওয়াল পেপার ব্যবহার করতে পারেন। আবার সেই দেওয়ালকে ফটোগ্যালারি বানিয়ে ফেলতে পারেন, যেখানে শুধু তার ছবি তুলে ধরা হবে।
একরাতেই শিশু তার অভ্যাস বদলে ফেলবে না। তাই সমাধান হিসেবে ফার্স্টক্রাই প্যারেন্টিং ডটকমে বিশেষজ্ঞরা এসব থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায় বলছেন। এক. দেওয়াল এমনভাবে সাজান, যেন সেখানে কোনো আঁকিবুঁকি না বসে। সে ক্ষেত্রে চকবোর্ড পেইন্ট দিয়ে দেওয়াল রাঙিয়ে ফেলতে পারেন। দুই. সহজে ধুয়ে ফেলা যায়, এমন ক্রেয়ন শিশুকে দিন। তাহলে আপনি স্বস্তিতে থাকবেন এই ভেবে যে এটা তো তুলেই ফেলা যাবে। তিন. বারবার শিশুকে মৃদুস্বরে বুঝিয়ে বলুন, এটা আঁকাআঁকির জায়গা নয়। কথাটা তার মস্তিষ্কে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
কিন্তু শিশু যখন আঁকবে, তখন তো বুঝেশুনে আঁকবে না। ফলে আঁকার সময় ওরা ভাববে না, কোনটার রং তোলা যাবে আর কোনটা যাবে না। তাই বিশেষ কোনো দেওয়ালকে রক্ষা করতে চাইলে সাবিহা কুমুর পরামর্শ, ওই দেওয়াল কোনো আসবাব দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়। ওখানে কিছু গৃহসজ্জার উপাদান রাখা যায়। কিংবা শিশুকে বিকল্প হিসেবে মেঝেতে বড় বড় কাপড় বা কাগজ বিছিয়ে বলা যেতে পারে, ‘তুমি এখানে আঁকো।’
এক দিনে সব ঠিক হবে না নিশ্চিত, কিন্তু একসময় হবেই। তাই রাগ না দেখিয়ে শিশুকে বরং বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন। এভাবেও কিন্তু কাজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।