ভাবুন তো, প্রবাসে আপনার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছে! চারিদিকে সাজ সাজ রব! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আপনি তার জন্য কিনে ফেললেন একখানা আস্ত ওয়াকার!
বৈঠকখানায় আপনার সন্তান, তার মা এবং ওয়াকারকে সাথে নিয়ে খুব কায়দা করে যেই না একটা সেলফি তুললেন, অমনিৃডিং, ডং কলিংবেল! আপনি দরজা খুললেন। ‘আপনাকে জরিমানা করা হয়েছে’। কিন্তু কেন? কারণ, আপনার কাছে ওয়াকার আছে। জরিমানার অংকটি দেখে তো আপনার আক্কেল গুড়ুম! এক লাখ ডলার!
কানাডার পণ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী শিশুদের ওয়াকার তৈরি করা, আমদানি করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং ওয়াকার বিক্রি কানাডায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই দেশে কারো কাছে ওয়াকার পাওয়া গেলে তাকে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হতে পারে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স মার্কিন মুল্লুকেও এই নিষেধাজ্ঞা চান। কেন? কারণ শিশুদের জন্য ওয়াকার বিপদজ্জনক। পেডিয়াট্রিক্স জার্নালের (অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স) গবেষণায় এই ওয়াকারের ভয়াবহতা উঠে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওয়াকারের কারণে আহত হয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা এই গবেষণায় জানা যায়। সংখ্যাটি চমকে দিতে বাধ্য। ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু (যাদের বয়স ১৫ মাসের কম)।
ওয়াকারে থাকা অবস্থায় শিশু সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করে মারাত্মক আঘাত পেতে পারে। ওয়াকারে শিশুর আঙুল আটকে যেতে পারে। হাতের নাগালে থাকে না এমন জিনিস যেমন ধারালো বস্তু, গরম পানি, তরকারি হঠাৎ নাগালে পেয়ে সে টান দিতে পারে। ওয়াকারের ভিতরে থেকে সে ওয়াকার নিয়েই পড়ে ব্যথা পেতে পারে।
তবুও মা-বাবারা কেন ওয়াকার ভালোবাসেন?
শিশু দ্রুত হাঁটতে শিখবে এই ভেবে মা-বাবারা ওয়াকার কেনেন। বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ওয়াকার ব্যবহারে শিশুর স্বাধীনভাবে হাঁটতে শেখায় দেরি হয়।
হাঁটা মানে শুধু নিজের পা জোড়ার ব্যবহার জানা নয়।
হাঁটার কয়েকটি ধাপ আছে।
দাঁড়াবে, ভারসাম্য রাখবে, কোন সাহায্য ছাড়া এক কদম, দুই কদম আগাবে- এভাবেই শিশু হাঁটতে শেখে। ওয়াকারে থাকলে এর কোনটাই শেখা হয় না।
মা-বাবারা ওয়াকার পছন্দ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে শিশুরা ওয়াকার ভালোবাসে, ওয়াকারে থেকে খেলতে মজা পায়। ওয়াকারে সে কোনভাবেই নিরাপদ নয়
ছয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা সোজা হতে চায়, স্বাধীনভাবে চলতে চায়। নানারকম জিনিস ধরা, ঘ্রাণ নেওয়া, চেখে দেখাতেই তাদের আনন্দ। ওয়াকারে থাকলে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।