শুধুই মাতৃদুগ্ধ পান করালে বছরে ৮ লাখের বেশি শিশুর জীবন রক্ষা পাবে। যে শিশুদের বেশির ভাগেরই বয়স ৬ মাসের কম। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে মা ও শিশু দুজনেরই উপকার হয়।
জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে মায়ের গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে, সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়, ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। জন্মবিরতিতে সাহায্য করে, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। শিশুর সর্বোচ্চ শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা এবং এর তীব্রতার ঝুঁকি কমায়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং কানের প্রদাহ কমায়, দাঁত ও মাড়ি গঠনে সহায়তা করাসহ অনেক উপকারিতা আছে।
মায়ের দুধ না খাওয়ালে- নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পায়, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য, কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়, জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়; দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন সারাদেশ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা মাসব্যাপী পালিত হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৪ সালে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। ২ বছর পর্যন্ত স্তন্যপান করাতে পারলে বছরে ৮ লাখ ২০ হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
দুগ্ধদান করে মায়েরাও জীবনসংহারী অনেক রোগ ঠেকিয়ে দিতে পারেন; সেজন্য তাদের আরো উৎসাহিত করতে বলেন চিকিৎসকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধই খাবে শিশু, এমনকি পানিও খাওয়ানো যাবে না। এরপর পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে অন্তত ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে। স্তন্যদুগ্ধের সঠিক সরবরাহ আছে কিনা তা জানার শ্রেষ্ঠ উপায় আপনার শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা। আপনার শিশুর সঠিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে নিয়মিত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে, শিশুর জন্মের পরে পরেই ওজন হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। প্রথম ৫ বা ৬ দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চাটি তার জন্মের সময়কার ওজন ফিরে পাবে।