নারীদের মধ্যে যে কয়েক ধরনের ক্যান্সার বেশি দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ওভারিয়ান ক্যান্সার। একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়। ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এখন অস্বাভাবিক বা বিরল কোনো রোগ নয়। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলে এই ক্যান্সার দ্রুত প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ওভারি বা ডিম্বাশয় সন্তানধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্ব তৈরি করে। পাশাপাশি শরীরের জন্য জরুরি ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। নারী শরীরে জরায়ু অর্থাৎ ইউটেরাসের দুই পাশে দুটি ওভারি থাকে। ওভারির যে কোনো অসুস্থতায় আপনার জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। চার ধাপে ডিম্বাশয় ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ধাপে একটি বা উভয় ওভারিতে ক্যান্সার ছড়ায়। দ্বিতীয় ধাপে ওভারি থেকে তলপেটের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে ক্যান্সার। তৃতীয় ধাপে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ধাপে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ওভারিয়ান ক্যান্সার। এই ক্যান্সার প্রথমদিকে শনাক্ত করা যায় না। অধিকাংশ রোগীই টের পান না তিনি এই ক্যান্সারে ভুগছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত পেলভিক জোনে ও পেটে না ছড়ায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বোঝা যায় না। ডিম্বাশয় ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ খুব সূক্ষ্ম হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায় ব্যথাহীন হয়। এ কারণে এই রোগ শনাক্তে দেরি হয়ে যায়।
ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী? : ১. ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ক্ষুধা কমে যায় ও পেট ভরা ভরা লাগে সব সময়। হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। ২. কোমরের নিচের দিকে দীর্ঘদিন ধরে চিনচিন করা ব্যথা হলে তা ডিম্বাশয় ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ৩. ওভারিয়ান ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো অনিয়মিত মাসিক। আবার যোনিপথে হঠাৎ রক্তপাত হওয়াও ভালো লক্ষণ নয়। তবে অনেক সময় ডিম্বাশয়ের সিস্টের জন্যও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। ৪. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয় এক্ষেত্রে। ডিম্বাশয়ের টিউমার ফুলে উঠে পেট, অন্ত্র, ব্ল্যাডার বা মূত্রথলিতে চাপ দিতে থাকলে এই সমস্যাগুলো হতে পারে। দীর্ঘদিন এমন সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৫. এছাড়া হঠাৎ ওজন কমতে শুরু করা, ঘন ঘন প্রস্রাব, পেলভিস এরিয়ায় ঘন ঘন ব্যথা, যোনি পথের আশপাশের চামড়ার রং পরিবর্তন বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। ৬. ওভারিয়ান ক্যান্সারের আরো কিছু লক্ষণ হলো- সাদা স্রাব নিঃসরণ, বেশি সময় ধরে তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি।
ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে কেন? অনিয়মিত মাসিক, গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন, একাধিক গর্ভধারণ ও অল্প বয়সে গর্ভাবস্থা হলে এ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার কিছু কিছু মেডিসিন ব্যবহারেও ডিম্বাণুতে টিউমার হতে পারে। যাদের প্রজনন অক্ষমতার জন্য হরমোনাল চিকিৎসা নিতে হয় তাদের ডিম্বাশয় ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকি থাকে। মেনপোজের আগে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কীভাবে শনাক্ত করা হয়? প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ও চিকিৎসা করা হলে পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যেই রোগী ৯০ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানিং, ল্যাপারোস্কপি, সিরাম টিউমার মার্কার টেস্ট ও ইমিউনোলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়।
প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওভারিয়ান ক্যান্সার ধরা পড়লে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন কতটুকু কার্যকর সেটা অনকোলজিস্ট বলতে পারবেন। যাদের শরীরে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তারা ঝুঁকি নিয়ে ওভারি ও ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ করতে পারেন। ওভারিয়ান ক্যান্সার রোধে এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব নারী সন্তানকে বুকের দুধ দেন তাদের মাঝে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কম। ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।