বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে থাকা ঘাতক রোগ হলো স্তন ক্যান্সার। আমাদের হাতে যে পরিসংখ্যান আছে, তা থেকে অনুমান করা যায়, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাতে মারা যান প্রায় ৮ হাজার জন। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এর পেছনে বড় কারণ সচেতনতার অভাব। এ ব্যাপারে নারীদের সংকোচ বোধ, দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, দেশে সার্বিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার অপ্রতুলতাও এই মৃত্যুর পেছনের কারণ। ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে বিশ্বে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেন এর ধারেকাছে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। রোগ নির্ণয়ে ল্যাব টেস্টের তেমন অগ্রগতি নেই। আধুনিক চিকিৎসা আর ল্যাব টেস্ট এসব ব্যাপারে পিছিয়ে থাকার কারণে বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রাথমিক পর্যায়ে এর অবস্থা নির্ণয়, ক্যান্সার স্ক্রিনিং, এসব ব্যাপারে সমন্বিত জাতীয় কর্মকৌশল তেমন চোখে পড়ে না। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি, সার্জারি আর কেমোথেরাপির প্রচলিত চিকিৎসা পেরিয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, সেসব ব্যাপারে তেমন দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা দেখা যায় না। সেসবের ভাবনা-চিন্তাও সম্ভবত নেই।
বিকিরণ চিকিৎসার যন্ত্রপাতি যা আনা হয়েছে, সেগুলোর দেখভাল, নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় সবগুলো অচল। ক্যান্সার চিকিৎসা আর শনাক্তের ক্ষেত্রে দুর্গতি অনেক বেশি জেলা শহরে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি। নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করে অসংগতি মনে হলে চিকিৎসকের কাছে আরো পরীক্ষার জন্য যেতে হবে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হতে পারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতা, উদ্বুদ্ধকরণ আর প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের মূল কেন্দ্র। ক্লিনিকে স্তন পরীক্ষার পর প্রয়োজনে ম্যামোগ্রামের জন্য রেফার করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। জানাতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে আর চিকিৎসা হলে ক্যান্সারে মৃত্যু ঠেকানো অনেকটা সম্ভব। কী করা উচিত? ১. যেসব নারীর বয়স ৪০ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে, তাদের প্রতিবছর ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ২. যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে, তাদের বছরে একবার ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ৩. ৫৫ বছরের বেশি বয়স হলে এক বছর পর পর ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ৪. সুস্থ থাকা পর্যন্ত স্ক্রিনিং চলবে।
কাদের আছে উচ্চ ঝুঁকি! যাদের স্তন ক্যান্সারের জোরালো পারিবারিক ইতিহাস আছে। জিন টেস্টিং করে যাদের শরীরে বিআরএসিএ১ ও বিআরএসিএ২ জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নারীদের জন্য ৩০ বছর বয়স থেকে প্রতিবছর দরকার হতে পারে স্তন মেমোগ্রাম এবং এমআরআই। পুরো অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস। একটি ম্যামোগ্রাম অনেক আগে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে। এছাড়া প্রতিদিন স্নানের সময় ঘরে শরীর অনাবৃত করে নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরীক্ষায় অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করলে জানাতে হবে চিকিৎসককে। এরপর একটি ম্যামোগ্রাম করলে এই ক্যান্সার আগাম চিহ্নিত হবে। তাতে চিকিৎসায় আসবে সুফল।