শিশুর টাইফয়েড হলে করণীয়
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম
সম্প্রতি শিশুদের জ্বরের প্রকোপ ক্ষেত্রবিশেষে এটির তীব্রতা অভিভাবক ও চিকিৎসকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর, টাইফয়েড জ্বর, প্রস্রাবে সংক্রমণজনিত জ্বর, রক্ত আমাশয় উল্লেখযোগ্য।
টাইফয়েড জ্বর পানিবাহিত রোগ। সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়। সংক্রমিত হওয়ার ১০-১৪ দিন পর জ্বরসহ এ রোগের অন্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। পানিবাহিত সালমোনেলা জীবাণু দূষিত পানি ছাড়াও দুধ অথবা দুগ্ধজাত সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। টাইফয়েড জ্বর যে কোনো বয়সেই হতে পারে।
তবে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের তীব্রভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। প্রধানত জ্বর, যা ক্রমান্বয়ে সিঁড়ির ধাপের মতো বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বমি, পাতলা পায়খানাসহ মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়া পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়াসহ জিহ্বার ওপর সাদা প্রলেপ পড়তে দেখা যায়।
৭ দিন জ্বর থাকার পর বুক-পেট ও পিঠে লালচে দানার মতো র্যাশ দেখতে পাওয়া যায়। এ দানাগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো, হাতের আঙুলের চাপে দানাগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথম ৭ দিন জ্বর অতিক্রম করে যাওয়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা শুরু না করলে শিশুদের নানা রকম মারাত্মক জটিলতা দেখা যায়। যেমন খিঁচুনি, অসাড় বোধ করা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্ত পায়খানা, জন্ডিস এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কখনো কখনো চতুর্থ সপ্তাহে এসে জ্বর আপনাআপনিই ভালো হয়ে যেতে দেখা যায়। অনেক সময় হঠাৎ করে জ্বর কমে গিয়ে শিশু সুস্থ বোধ করতে দেখা গেলেও খুশি হওয়ার কারণ থাকে না। কারণ এ সময় শিশু ক্রমাগত আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়।
অন্যান্য জটিলতার মধ্যে নিউমোনিয়া, হাড়ের প্রদাহ, অস্থিসন্ধির প্রদাহ, স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে প্রদাহ ও কিডনির প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
পরীক্ষা : জ্বরের প্রথম সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বর নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে পরে রক্ত ও প্রস্রাব-পায়খানার কালচার পরীক্ষা ও ভিডাল টেস্ট করে রোগ নিরূপণ করা সম্ভব।
যখন হাসপাতালে নেবেন : মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, বার বার বমি হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, পায়খানায় রক্ত যাওয়া, খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা : পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। জ্বর কমে যাওয়ার পরও ৩ থেকে ৫ দিন যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়াতে হবে। ভালো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করলেও জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এ সময় অভিভাবকরা ধৈর্যহীন হয়ে পড়েন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সর্বোত্তম।
প্রতিরোধ : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা, নিরাপদ পানি বা খাবার গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা, টিকা প্রদান করা- এক বছর থেকে ছোট-বড় সবাই এ টিকা নিতে পারে। সবার জন্য এ টিকার একটি ডোজ মাংসপেশিতে ৩ বছর পরপর দিতে হয়। টাইফয়েড কোনো ছোঁয়াচে জ্বর নয়। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা নিলে ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।