ঢাকা ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্টার্টআপের প্রতিটি সেকেন্ড চ্যালেঞ্জিং

আফছানা নিপা
স্টার্টআপের প্রতিটি সেকেন্ড চ্যালেঞ্জিং

আফছানা ভূইয়া নিপা একজন সফল নারী উদ্যেক্তা। কাজ করছেন মনিপুরী শাড়ির ফিউশন নিয়ে। তার উদ্যোগের নাম আফছানানিপা। তার উদ্যেক্তা জীবনের সফলতা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন আলোকিত বাংলাদেশের নারী ও শিশু বিভাগে। লিখেছেন রেজাই রাব্বী-

আপনার উদ্যোগের নাম কী?

আমার উদ্যোগের নাম আফছানানিপা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সিলেটের তাঁতের তৈরি মনিপুরী শাড়ির ফিউশন। এখন শুধু শাড়ি নয় বরং বাংলাদেশের যারা কারিগর আছেন তাদের নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের থ্রিপিছ, পাঞ্জাবি, লেহেঙ্গা তৈরি করছি।

এত পণ্য থাকতে এই উদ্যোগ বেছে নিলেন কেন?

যখন মনিপুরী শাড়ি নিয়ে কাজ করব ভাবছিলাম তখন মনিপুরী সম্প্রদায় এবং মনিপুরী তাঁত নিয়ে লেখাপড়া শুরু করি আর সেটা দীর্ঘ ২ বছর ধরে। লেখাপড়া করতে গিয়ে মনিপুরী শাড়ির প্রতি একটা ভালোবাসা চলে আসে। আর এটাও বুঝতে পারি, ভিন্ন ধারার কিছু করতে পারলেই মনিপুরী শাড়ির প্রচার বাড়বে এবং তাঁতীদের তাঁতপাড়া আরো বেশি সচল হবে।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই?

উদ্যোগতা হওয়ার গল্পটা আমার কোনো ট্র্যাজিক বা দুঃখের নয়। চাকরি ছেড়ে সন্তানকে সময় দিচ্ছিলাম এবং ভেবেছিলাম নিজের বিজনেস শুরু করলে সন্তানকে সময় দেয়া সহজ হবে আর বাসায় বসেই কাজ করতে পারব- এই ধারণা থেকেই উদ্যোগ শুরু। আর প্রতিটি ওয়ার্কিং মেয়েই চায় বাসায় বসে শুধুমাত্র সংসার না করে সাথে নিজের কিছু কাজ করা উচিত, যা দেখলে তার সন্তানদের ও একই ভাবনা থাকবে সংসারের পাশাপাশি একটা কাজ করতে হবে শুধুমাত্র একটা মেয়ের বিয়ে বা সন্তান হলেই জীবনের প্রাপ্তি শেষ নয়, সাথে একটা মেয়ের নিজের পরিচয় লাগে।

উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা কী?

উদ্যোগের স্বার্থে এবং নিজের তাগিদে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম সন্তান এবং উদ্যোগ একসাথে চলাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। বিশেষ করে একটা মেয়ের জন্য। শুধু একটা মেয়েকে সন্তান দেখলেই হয় না সাথে সংসার, সামাজিকতা এবং লোকে কী ভাববে- এই সব চিন্তা করে উদ্যোগ’র ডিজাইন থেকে শুরু করে, কালার কম্বিনেশন, কারিগরদের সাথে কাজ, তাঁতীদের সাথে কাজ, মার্কেটিং, সেলিং, প্যাকেজিং সবকিছু একসাথে করতে চেয়ে মনে হয়েছে চাকরি করলে হয়তো কিছুটা সময় হাতে পেতাম কিন্তু নিজের বিজনেস সাসটেইন করতে হলে প্রতিদিন কত কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, তা সত্যিই যারা নিজেদের উদ্যোগকে ভবিষ্যতে একটা ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে দেখতে চায় এবং স্টার্টআপ সফল করতে চায়, তাদের জন্য প্রতিটি মিনিট চ্যালেঞ্জিং। এছাড়া আমরা যারা অনলাইনে কাজ করছি, তাদের জন্য সাইবার বুলিং এবং প্রতারণা হওয়ার ভয়টা অনেক; এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের।

কীভাবে এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেন?

দেখুন, মান্টিটাস্কিং করতে না পারলে উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে দিনশেষে। নিজের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেলে মাথায় চাপ বাড়বে, সাথে পরিবেশ আর সমাজের উপর প্রভাব তো পড়বেই। এসব ভেবে কোনো কিছুই প্রতিবন্ধকতা ভাবতে পারি না। মনে হয় প্রতিটি মেয়ের বাড়ির বাইরে যেয়ে কাজ করাটাই প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের দেশ আর দেশের মানুষ অনেকটাই স্ট্যাবল।

তারা বুঝতে শিখছে, জানছে ধীরে ধীরে। আমরা যা ফেইস করছি হয়তো ভবিষ্যতে যারা কাজ করতে আসবে তারা ফেইস করবে না এই ভরসা করতেই পারি নিজের দেশের জনগনের প্রতি। আর দিনশেষে পরিবার অনেক জরুরি যদি তারা সাপোর্টিভ হয় তাহলে প্রতিবন্ধকতা বলে কিছু নাই এবং একটা কথা বলে রাখা ভালো পার্টনারের সাথে যদি ট্রান্সপারেন্সি থাকে এবং বোঝাপড়া ভালো হয়, তাহলে কোনো মেয়ের প্রতিবন্ধকতা বলে কিছু নাই।

একজন উদ্যেক্তা হিসেবে নিজেকে পাঁচ বছর পর কোথায় দেখতে চান?

আমি আসলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারি না। আমার কাছে ভবিষ্যৎ মানেই হচ্ছে অনিশ্চিত। শুধু চিন্তা করতে পারি, দেশ থেকে ট্রলিং টা যদি বন্ধ হতো, নেগেটিভ বিষয়গুলোকে যদি একটু ইগনোর করা যেত, অনলাইনে কারো ব্যক্তিগত বিষয় যদি একটু ব্যক্তিগত রাখা যেত, তাহলে হয়তো অনলাইন জগত অনেক বেশি মজার আর তাৎপর্যপূর্ণ হতো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত