শিশুরা চঞ্চল হবেই। দুরন্তপনা তাদেরই মানায়। কিন্তু কিছু শিশু থাকে যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চঞ্চল। তাদের সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হয়। কারণ, তারা সুযোগ পেলেই এটা ভাঙে তো ওটা ধরে নষ্ট করে, একে মারে তো ওর খেলনা নিয়ে চলে আসে। মা-বাবার ছোটাছুটি চলতেই থাকে তার পেছনে। মেডিকেলের ভাষায় শিশুর এই সমস্যাকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-অ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার অর্থাৎ, শিশুর মনোযোগের অভাব এবং অতি-চঞ্চলতা জনিত সমস্যা। এটি মস্তিস্কের বিকাশগত (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল) সমস্যা। অতিরিক্ত চঞ্চল শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কিন্তু আপনার সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং গঠনমূলক কৌশলে পরিস্থিতি পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ। বলপ্রয়োগ না করে বা ধমক না দিয়ে, হাইপার-অ্যাক্টিভ শিশুকে শান্ত হতে সহায়তা করার জন্য এই পরামর্শগুলো মেনে চলুন- রুটিন তৈরি করুন- আপনার হাইপার-অ্যাক্টিভ শিশুটির জন্য একটি নিয়মিত এবং সুসংগঠিত রুটিন তৈরি করুন। এ ধরনের শিশু যখন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে তখন সে আরো নিরাপদ বোধ করে। ফলে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে তার আচরণও গোছানো হতে থাকে। তাই শিশুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি রুটিন তৈরি করুন। পুষ্টিকর খাদ্য এবং ব্যায়াম- শিশুকে অবশ্যই পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে দিতে হবে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং স্ন্যাকস কম খেতে দিন। কারণ, অতিরিক্ত চিনি কিছু শিশুকে হাইপার-অ্যাকটিভ করে তুলতে পারে। আপনার শিশুর অতিরিক্ত শক্তি ঝরাতে সাহায্য করার জন্য ঘন ঘন শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিন। খেলাধুলা, সাইকেল চালানো, বাইরে খেলা বা এমনকী হালকা ব্যায়াম তার জন্য ভালো হতে পারে। শান্ত পরিবেশ- আপনার বাড়িতে কোনো একটি স্থানে বিশেষ শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে শিশুরা প্রশান্তিদায়ক গেম খেলতে পারে। সেখানে বই পড়া, ছবি আঁকা কিংবা এ ধরনের কোনো কিছুর জন্য পরিবেশ তৈরি করুন। শিশুটি যেন নিজের মেধা ও প্রতিভা বুঝতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাকে যথাযথভাবে সহায়তা করুন। স্ট্রেস বল ব্যবহার করা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া এবং দশ পর্যন্ত গণনা করার মতো পদ্ধতিও এ ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। মননশীলতার কৌশল- শিশুর বয়সের জন্য উপযুক্ত মননশীলতা এবং শিথিলকরণ ব্যায়াম চালু করুন। গাইডেড ভিজ্যুয়ালাইজেশন, সংক্ষিপ্ত মেডিটেশন সেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সাহায্যে শিশুটি তার শক্তির মাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা শিখতে পারবে। স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন- কম্পিউটার, টিভি এবং ভিডিও গেমের মতো স্ক্রিনের সামনে শিশুর সময় কাটানো কমিয়ে দিতে হবে। স্ক্রীনে অনেক বেশি সময় কাটানোর অভ্যাস হাইপার-অ্যাক্টিভিটি এবং অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণ হতে পারে।