সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে একটি দৃঢ় এবং স্বচ্ছ সম্পর্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য। কোনো ধরনের জাজমেন্ট ছাড়াই সন্তানের চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানা, তার আবেগ বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকতে হবে। ভয় দেখানো নয়, বরং তার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তার কৃতিত্ব উদযাপন করুন, ব্যর্থতায়ও পাশে থাকুন। তবে মা-বাবার কেবল বন্ধু হলেই হয় না, তাকে আরো কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়। তাই সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন-
কোয়ালিটি টাইম কাটান : সন্তানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। যদিও বর্তমান ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনে তা কিছুটা কঠিন হতে পারে। তবে গ্যাজেট কিংবা ইন্টারনেটের দুনিয়া ছেড়ে তাদের সঙ্গে প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া পরিবেশে সময় কাটান। সন্তানের সঙ্গে গল্প করার সময় সব ধরনের ডিভাইস আপনাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এতে আপনাদের সময় সত্যি সুন্দর কাটবে। এমনকী আপনিও পরবর্তী দিনের কাজে উৎসাহ খুঁজে পাবেন।
অর্থপূর্ণ কথোপকথন : বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল হোন। এটি আপনাদের মধ্যে কথোপকথনকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করবে। নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠুন। তাকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করুন। তার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হোন। অনেক কিছু আপনার চিন্তাভাবনার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। তবে বয়সের পার্থক্য বলেও একটি জিনিস আছে। সে বিষয়টি মাথায় রাখুন। কথা বলার সময় নিজের মূল্যবান কথাগুলোই বলুন। অহেতুক রাগারাগি সম্পর্কটি খারাপ করে দিতে পারে।
সন্তানের আগ্রহের প্রতি আগ্রহ দেখান : আন্তরিক উৎসাহের সঙ্গে সন্তানের শখ এবং সাধনায় সমর্থন দিন। এটি শুধু আপনাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করবে না বরং তার আবেগ যে আপনার কাছে মূল্যবান সেটিও প্রকাশ করবে। সন্তানের জীবনে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হোন, যিনি প্রয়োজনের সময় নির্দেশনা দেয় এবং তার স্বাধীনতাকে সম্মান করেন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন : সন্তানের কথা ভালো করে না শুনেই তাকে উপদেশ দেয়া শুরু করবেন না। প্রথমে মন দিয়ে শুনুন সে যা বলতে চায়। এতে সে নিজে থেকেই আপনার কাছ থেকে উপদেশ শুনতে চাইবে। কারণ, তখন সে নিশ্চিন্তে নিজের আবেগ ও ভালোলাগা-মন্দলাগার কথা আপনার কাছে বলতে পারবে। আপনার মতামতও তখন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সন্তানের আবেগ, আনন্দ, রাগ বা হতাশাকে বরণ করতে শিখুন। কারণ, সেও আপনার মতোই আলাদা একজন মানুষ।
স্মৃতি তৈরি করুন : সন্তানের সঙ্গে সুন্দর ও সুখকর স্মৃতি তৈরি করুন। মানুষের সঙ্গে মানুষের মূলত স্মৃতিরই সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে নানা স্মৃতিময় গল্প ভাগাভাগি করতে পারেন। সন্তানের একজন ভালো বন্ধু হওয়ার অর্থ হলো তার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তার সুখ ও সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনভাবে প্রচেষ্টা করা। বাবা-মা-সন্তানের বন্ধন তৈরি করার পাশাপাশি এই বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে তার বাকি জীবনের জন্য সহায়ক এবং বিশ্বস্ত সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করুন।