মা-বাবাই একজন মানুষের প্রথম শিক্ষক। সন্তান মূলত তা-ই শিখবে, যা আপনাদের ভেতরে দেখতে পাবে।
তাই মা এবং বাবার আচরণে সংযত হওয়া সবচেয়ে জরুরি। শিশুর সামনে যদি মিথ্যা বলেন, তাহলে শিশু মিথ্যাকেই সহজভাবে গ্রহণ করবে এবং সেও মিথ্যা বলতে শিখবে। আপনার সন্তান হলো আপনার আয়না। আপনার প্রতিবিম্বই তার মাঝে প্রতিফলিত হবে।
তাই সবার আগে নিজের দিকে তাকান। নিজের ভেতরে এমন কিছু বসবাস করতে দেবেন না যা সন্তানের মধ্যে দেখতে চান না। অভাব বনাম আভিজাত্যের লড়াই চলবেই। কিন্তু সবার আগে সন্তানকে শেখাতে হবে, এই দুই জিনিস আসলে কীসে থাকে? মূলত অভাব কিংবা আভিজাত্য থাকে মানুষের স্বভাবে। অনেকের দেখবেন, অনেক আছে কিন্তু তারা সন্তুষ্ট নন।
আবার অনেকে অল্পতেই খুশি থাকতে শেখেন। সম্পদের হিসাব করলে একজন ধনীর থেকে আরেকজন ধনী, এভাবে অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। আবার গরিবের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই। কিন্তু যিনি যে অবস্থানে আছেন, সেখান থেকে কতটা সুখী বা অভাবমুক্ত; সেটাই আসল। তাই অর্থের অভাব থাকলেও অন্তরের আভিজাত্য যেন নষ্ট না হয়, সন্তানকে সেটাই শেখান।
ইতিবাচকতা শেখান : সন্তানকে একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন।
এই শেখানো মানে তো সিলেবাস মেনে পড়ানো নয়, শুরুতেই যেমনটা বলেছি, এটি থাকতে হবে আপনার স্বভাবে।
মা-বাবার মধ্যে ইতিবাচকতা, অন্যের যেকোনো খুশির খবরে আনন্দিত হওয়া, অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া, ক্ষমা করতে জানা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে শিশু তা-ই শিখে শিখে বড় হবে।
শিশুর মধ্যে কোনো নেতিবাচকতা গড়ে উঠতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সতর্ক করতে হবে। এর ভয়াবহতা তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। একজন ইতিবাচক চিন্তার মানুষ এই পৃথিবীর সম্পদ, তাতে সে হোক ধনী কিংবা দরিদ্র। সন্তানকে একজন নির্লোভ মানুষ হিসেবে দেখতে চাইলে সবার আগে আপনাকে নির্লোভ থাকতে হবে।
আপনি যদি অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করেন, যদি কর্মজীবনে অসৎ হন, যদি ঘুষ-সুদ ইত্যাদি গ্রহণ করেন, যদি দরিদ্রের সম্পদ দখল করেন, যদি আত্মীয়ের হক নষ্ট করেন, ভাইবোনদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনার সন্তানের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা ভুল হবে। নিজে যে পথে থাকবেন, সন্তান তো সেই পথেই যাবে। তাই নিজের পথটা সহজ রাখুন। তখন সন্তানই আপনার সম্পদ হয়ে উঠবে।
বিনয় এবং ক্ষমা : একজন ভালো মানুষের স্বভাবে থাকে বিনয়, থাকে ক্ষমা করার মতো উদারতা। এই দুই শিক্ষা সন্তান যেন আপনার কাছ থেকে পায়। তাকে শেখান, ঘৃণার চেয়ে ক্ষমা সুন্দর, আঘাতের চেয়ে ভালোবাসা। আর সুন্দর সবকিছু স্বভাবে থাকলে সেই মানুষই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল হয়ে ফুটে থাকে। তার সৌরভে সুবাসিত হয় আরো অনেকেই। আপনার মধ্য থেকে আপনার সন্তানের মধ্যে বয়ে চলুক এই ভালোবাসার ধারা।
প্রয়োজনে কঠোর হতে শেখান : শুধু ফুলের কোমলতা নয়, সন্তানকে শেখান প্রয়োজনে লৌহ কঠিনও হতে।
ফুল ভেবে কেউ যদি তাকে পায়ে দলতে আসে, তাকে যেন সেই সুযোগ দেয়া না হয়, সন্তানকে এটুকু শেখাতে হবে।
কখন কোমল হওয়া প্রয়োজন এবং কখন তাকে কঠিন হতে হবে, এটা বুঝতে শেখান। পরিস্থিতি বুঝতে পারা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক বড় গুণ। এটি আপনার সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন অনেকটাই।