এরইমধ্যে অনেকেই নতুন পোশাক কিনে ফেলেছে ঈদের জন্য। আর ঈদের দিন কোন বেলায় কোন পোশাকটি পরা সেটা নিয়ে চলে নানা পরিকল্পনা। অনেকেই সকালে ফ্রেশ হয়েই একটা হালকা পোশাক পরে ফেলেন। দুপুর এবং রাতের জন্য থাকে পছন্দের আলাদা পোশাক। সেই সঙ্গে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজটা কেমন হবে, তা নিয়েও যেন ভাবনার অন্ত নেই। ঈদের তিন বেলায় তিন রকম সাজে হয়ে উঠুন সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। পোশাকের পাশাপাশি সাজটা কেমন হবে সে বিষয়ে জানিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ এবং ফ্যাশন ডিজাইনাররা।
‘ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেয়েরা একটু বেশিই ব্যস্ত থাকে রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়ন নিয়ে। তাই সকালের দিকে পোশাকটা হতে হবে খুব আরামদায়ক। সেই ক্ষেত্রে সুতির সালোয়ার কামিজ বা কুর্তি পরতে পারেন। অনেকেই সকালে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। তাই চাইলে পাতলা শাড়ি পরে ফেললেন।’ আর সকালের সাজটা হবে খুবই হালকা। জারাস বিউটি লাউঞ্জের স্বত্বাধিকারী এবং রূপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি বলেন, ‘বেস মেকআপে শুধু কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে তার ওপর ফেস পাউডার লাগিয়ে নিন। কাজল না দিয়ে চিকন করে ওয়াটার প্রুফ আইলাইনার লাগাতে পারেন যেন দুপুর বা বিকালের সাজে চোখের নিচে কালো ভাবটা না থাকে। সাথে একটু ভারি করে মাশকারা লাগান। গালে দিন হালকা গোলাপি ব্লাশন। ঠোঁটে হালকা করে লাগিয়ে নিন মিষ্টি গোলাপি, বাদামি, কফি বা ন্যাচারাল রঙের লিপস্টিক। কপালে পরতে পারেন ছোট্ট একটি টিপ।
যেহেতু গরম তাই চুলের সাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকালে চুলটা ছেড়ে না রেখে খোঁপা বা বেণি করে বেঁধে ফেললে আরামদায়ক হবে। কেউ চাইলে একটা বেলী ফুলের মালাও গুঁজে দিতে পারেন। সকালের হালকা সাজের সঙ্গে ভালো লাগবে পার্ল, পুঁতি কিংবা স্টোনের ছোট গহনা। সব মিলিয়ে আপনাকে লাগবে পবিত্র, স্নিগ্ধ ও সতেজ।’
দুপুরে উৎসবের আমেজ : ঈদের দুপুরের সাজে আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য। অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এই সময় পোশাকটি পরুন সুতি বা ভয়েলের লং কামিজ বা কুর্তি, শর্ট কুর্তি, শর্ট হাতা কামিজ বা কুর্তি, ফতুয়া এগুলো। রং হিসেবে বেছে নিন অফ হোয়াইট, বিস্কিট, হালকা গোলাপি, আকাশি, লেমন, হালকা নীল, বাঙ্গী, হালকা বাসন্তী এরকম হালকা যে কোনো রং। আমরা গরমে আরামের দিকটা মাথায় রেখে এই পোশাকগুলো রেখেছি বিভিন্ন কাটিং ও প্যাটার্নে। তবে হালকা কাজের এমব্রয়ডারি, সুতার কাজ, ব্লক প্রিন্ট এরকম নকশা ও ডিজাইন করা পোশাকও রয়েছে। সেগুলো পরতে পারেন দুপুরে। এতে পোশাক যেমন আরামদায়ক হবে তেমনি নতুনত্বও বজায় থাকবে। কেউ চাইলে লিলেনও পরতে পারেন। তবে অবশ্যই একটু ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন যেন সেটা পরে এবং চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। আর মেকআপের ক্ষেত্রে বেসটা সকালের মতো হলেই সতেজ লাগবে দেখতে।’
রাতের সাজে জমকালো : রাতের সাজটা একটু জমকালো করেই সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন। এ বিষয়ে রং বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘এবার ঈদটাই প্রচণ্ড গরমে পড়ে গেছে। তাই আমরা সব পোশাকগুলোর স্টাইলে ভিন্নতার পাশাপাশি আরামের দিকটা খেয়াল রেখেছি। ঈদের দিনটা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সবারই ব্যস্ততায় কাটে। সবাই বেরই হয় বিকাল বা সন্ধ্যায়। সেটা হতে পারে ঘুরতে বা কোনো দাওয়াতে। সেই ক্ষেত্রে সাজপোশাকটা একটু জমকালো হলে ভালো লাগে। তখন একটু গর্জিয়াস পোশাকটাই পরবে সবাই। এর মধ্যে গাউন, লং কুর্তি, বাহারি ডিজাইনের শাড়ি পরতে পারেন। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এক্সক্লুসিভ কালেকশনগুলোই রাখা হয়েছে যেন সবাই সন্ধ্যার পর পরতে পারে। এই পোশাকগুলোতে একটু গাঢ় রং ব্যবহার করা হয়েছে যেটা পার্টি বা দাওয়াতে অনায়াসে মানিয়ে যাবে। এগুলো সুতি না হয়ে মসলিন, সিল্ক এবং জর্জেট হলে বেশ উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত লাগে। আসলে সারা দিন ব্যস্ততার পর সাজসজ্জার ব্যাপারটাই আসে বিকালে। তাই সকাল বা দুপুরে হালকা সাজপোশাকে থাকলেও বিকালেই সবাই ঈদের জন্য কেনা মূল ড্রেসটি পরে বের হয়। সেই সাথে সাজটাও দিতে হয় পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই। ‘পোশাকে যেটাই হোক তার সাথে সাজ ও জুয়েলারির একটা সামঞ্জস্য থাকলে যে কোনো উৎসবে সবার নজর কাড়া যায়। পোশাকটা খুব বেশি গর্জিয়াস হলে সাজটা খুব বেশি ভারী না হলেই ভালো লাগবে। আর যদি পোশাকটা একটু হালকা কাজের মধ্যে হয় তখন মেকআপটা হতে পারে একটু ভারী।
রাতের সাজে চুলটা ইচ্ছামতো ছেড়ে রাখতে বা বেঁধে ফেলতে পারেন।
পোশাকের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন কখন কোন মেকআপ মানাবে, কোন পোশাকের সাথে কোন গহনা পরবেন এবং সেই সাথে চুলের সাজটাও যেন হয় পোশাক এবং মুখের আদলের সাথে মানানসই।’