ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মা যখন কর্মজীবী

মা যখন কর্মজীবী

আমাদের সমাজে সবসময় মেয়েদের শারীরিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বা মানসিক দিক থেকে একটু দুর্বল ভাবা হয়। আগে একটা সময় ছিল যখন মনে করা হতো মেয়েরা শুধু বাসায় থাকবে, ঘরের কাজ করবে, বাচ্চা লালন-পালন করবে। এখানে লিঙ্গগত ভূমিকা শিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা আমাদের সামাজিক শিক্ষণের একটি অংশ। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয় কোনটা ছেলেদের কাজ আর কোনটা মেয়েদের কাজ। কিন্তু এখন সময়ের সাথে সাথে মেয়েরা তাদের যোগ্যতা ঘরের বাইরেও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ছেলেরাই শুধু অর্থ উপার্জনকারী এই চিরায়ত প্রথাকে ভেঙে তারাও অর্থ উপার্জন করছে, প্রয়োজনে ঘরের বাইরে কাজ করছে। এতে করে মেয়েদের দায়িত্ব অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বাস্তবতা হলো কর্মজীবী মেয়েদের এখন ঘরের এবং বাইরের (অফিসের) সব কাজই সমানভাবে সামলাতে হচ্ছে। আর মেয়েটা যখন একজন মা তখন তো তার দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। অর্থ উপার্জন নারীকে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, স্বাধীনতা এবং স্বাবলম্বীতা দিয়েছে। কর্মজীবী মায়েরা তাদের সন্তান এবং পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা সহজেই করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী মায়ের মেয়েরা তুলানামূলক বেশি বুদ্ধিমতি, উচ্চশিক্ষিত এবং ক্যারিয়ারের প্রতি বেশি সচেতন হয়। ইদানীং কর্মজীবী মায়ের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক আচরণ কমে যাচ্ছে, ছেলেরাও গৃহস্থালি কাজে মেয়েদের সাহায্য করছে। অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একজন কর্মজীবী মাকে প্রতিনিয়ত অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-

শারীরিক এবং মানসিক চাপ : একজন কর্মজীবী মাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক এবং মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। যেহেতু তাকে বাসার এবং অফিসের কাজ দুটোই সামলাতে হয়। মা যখন অফিসে থাকেন তখনও সন্তানের চিন্তা তাকে ভাবায়। এতে করে মা সবসময় একটা মানসিক চাপ বোধ করেন।

সময় বণ্টন : একজন কর্মজীবী মা সবসময় সময় বণ্টন নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন। অফিসের কাজ এবং বাসার কাজ কোনটা কখন এবং কীভাবে করবেন। অবশ্যই একজন শুধু গৃহিণী বা একজন শুধু কর্মজীবী নারী, যার ছোট বাচ্চা নেই তার থেকে একজন কর্মজীবী মায়ের কাজ এবং দায়িত্ব অনেক বেশি।

অপরাধবোধ : আমরা সবাই জানি সন্তানের জন্য মায়ের সান্নিধ্য এবং যত্ন কতটা গূরুত্বপূর্ণ। একজন কর্মজীবী মা কাজের প্রয়োজনে অনেকটা সময় বাইরে থাকেন, সন্তানকে কম সময় দিতে পারেন। এ কারণে তিনি অনেক সময় অপরাধবোধে ভুগতে পারেন। আর এই অপরাধবোধে ভোগার কারণেই অনেক মা চাকরি ছেড়ে দেন।

মানসিক দ্বন্দ্ব এবং হতাশা : বাসায় বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য যদি পর্যাপ্ত মানুষ না থাকে মা সব সময় দ্বন্দ্বে ভোগেন। যেমন, চাকরি করবেন নাকি করবেন না, ডে-কেয়ার সেন্টারে দেবেন নাকি দেবেন না; এরকম আরো অনেক। এই দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ সময় হতাশায় রূপ নেয়।

সন্তানের শারিরীক এবং মানসিক বিকাশ : যৌথ পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও বাচ্চার অনেক আপনজন থাকে। সেক্ষেত্রে মা বাইরে কাজ করলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা বাচ্চার দেখাশোনা করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কাজের মেয়ে বা ডে-কেয়ার সেন্টারই কর্মজীবী মায়েদের ভরসা। যদিও এদের সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘসময় আপনজন ছেড়ে থাকা শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

অন্যের মন্তব্য : কারও প্রশংসা বা উৎসাহ সূচক কথা যেমন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, তেমনি কারও নেতিবাচক মন্তব্য অনেক সময় আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। কর্মজীবী মায়েদের প্রতিনিয়ত অনেক নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়।

বাচ্চার অসুস্থতা : ‘হাভার্ড উমেনস হেলথ স্টাডি’র বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মজীবী মায়েরা অন্য যেসব মায়েরা বাসায় থাকে তাদের তুলনায় ঘন ঘন অসুস্থ হয়। তাদের মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা এবং হৃদরোগে ভোগার ঝুঁকি বেশি। সন্তান জন্মদানের পর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি, অতিরিক্ত কাজের চাপ পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব এর কারণ হতে পারে। এছাড়াও নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী মায়ের বাচ্চারা তুলনামূলকভাবে দুর্ঘটনা ও অ্যাজমাসহ অন্যান্য রোগে বেশি ভোগে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত