তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণায় ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ঝড়
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৯:৪১ | অনলাইন সংস্করণ
সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম
একজন লেখেন ‘তামিম ক্রিকেটে ফিরে এসো-বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তোমাকে চাই’। আরেকজন ছড়া কেটে লিখলেন ‘কে দিয়েছে এত বেশি তামিম তোমার মত! অভিমানে ফুরিয়ে গেলে মাথা করে নত’। আরেকজন লেখেন, ‘তামিম তোমাকে ভুলবনা’। এ ধরনের অসংখ্য স্ট্যাটাস ছিল ফেসবুকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। এরপর ফেসবুকে শুরু হয় তামিমকে নিয়ে নানা ট্যাটাস দেয়া। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণার সময় বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আর এই কান্নার ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এরপর একের পর এক স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে ফেসবুকে। তামিম ইকবালের ক্রিকেট ছাড়ার আবেগতাড়িত ঘোষণা অনেককে আবেগতাড়িত করেছে। বেশিরভাগই তামিমকে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন। আবার হঠাৎ ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্তের পেছনে কে দায়ী বা কারো আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তামিম এই সিদ্ধান্ত নেন তা নিয়ে নানা জন নানা ধরনের মতামত তুলে ধরেন। বিশেষ করে তামিম চট্টগ্রামের ছেলে হওয়ায় এই এলাকার ক্রিকেট প্রেমিরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তা স্ট্যাটাস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কেউ কেউ ক্ষোভ ঝাড়েন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রতি।
বুধবার রাতে গণমাধ্যম কর্মীরা একটি ক্ষুদে বার্তা পান মোবাইল ফোনে। সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে ব্রিফ করার কথা জানানো হয়। তবে কেউ বিশ্বাস করেননি তামিম অবসরের ঘোষণা দেবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই ঘোষণা শুনে গণমাধ্যম কর্মীরাও বিস্মিত হন।
তামিম ইকবালের হঠাৎ জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণার পর অনেকে মনে করেন তিনি হয়তো অধিনায়কত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন। সেই ঘোষনাই আসতে পারে। সেই হোটেলের নির্ধারিত সময়ের ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগেই হাজির হন তামিম। হাজির হওয়ার ৭ থেকে ৮ মিনিটের মধ্যেই তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। কথা বলার মধ্যে অন্তত চার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্না দেখে অনেকে ক্ষনিকের জন্য আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুর ঘোষণাতেও স্পষ্ট কিছু ছিলনা। দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের কথা জানানো হয়, স্থানের নাম উল্লেখ না থাকলেও অনেকেই ধরে নেন পাঁচ তারকা হোটেল হোটেল রেডিসন ব্লুতেই হবে। বেলা পৌনে ১২টার গণমাধ্যম কর্মীরা নিশ্চিত হন সংবাদ সম্মেলন নগরীর হোটেল টাওয়ার ইনে হচ্ছে। তাও বেলা ১২টার পরিবর্তে দুপুর দেড়টায়। নির্ধারিত সময়ের ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগেই হাজির হন তামিম। হাজির হওয়ার ৭ থেকে ৮ মিনিটের মধ্যেই শুরু করেন কথা বলা। এসময় চার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, গতকাল ছিল আমার শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি, এখনই। এটা হঠাৎ সিদ্ধান্ত না, আমি এটা নিয়ে ভেবেছি। এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আামর এখানে বলার দরকার আছে বলে মনে করি না।
তামিম বলেন, এটা না যে আমি হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে কথা বলছিলাম, এমনকি আমার পরিবারের সদস্যদের সাথেও। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সঠিক সময়। আমার মনে হয় যারা প্রাপ্য তাদের ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন। আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, আমি খেলাটি খেলেছি...।’
কথা শেষ না করে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই ক্রিকেটার। প্রায় ৪৫ সেকেন্ড পর নিজেকে সামলে নিয়ে ফের বলা শুরু করেন। তামিম বলেন, আমি সবসময় বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। বাবার স্বপ্নের কথা বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কিছুক্ষনের মধ্যে নিজেকে সামলে নেন। এরপর তামিম বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি জানি না আমি ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কতটুকু তা পূরণ করতে পেরেছি। অসংখ্য মানুষকে আমার ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, ওনার নাম আকবর খান। ওনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তিনি এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ।
এরপর ছোটবেলার কোচের কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তামিমের। আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর ক্রিকেটে নিজের চেষ্টার কথা বলতে গিয়ে চোখ মোছেন তিনি৷
তামিমের অবসরের ঘোষণায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক ভক্ত সমর্থক। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই তামিম ইকবালের কান্নার ছবি ও ভিডিও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও অনেকেই তার অবসরে কষ্ট পাওয়ার কথা জানান। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাস্তায় হাত চাপড়ে এক ভক্তকে কাঁদতে দেখা গেছে। সঙ্গে থাকা কয়েকজন চেষ্টা করছিলেন তাকে শান্ত করার। একজন ভক্ত তার গাড়ির নিচে চলে যেতে উদ্দত হন। পরে তাকে আশপাশের লোকজন সামলে নেন।