ওয়ানডে: প্রথমবার ভারতকে হারাল বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
ভারতের মেয়েদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। তবুও ঘরের মাঠে শেষ পর্যন্ত সিরিজ হারের আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিল টাইগ্রেসদের। এবার ওয়ানডে সিরিজে শুরুতেই দাপট দেখাল বাংলাদেশের মেয়েরা।
রোববার (১৬ জুলাই) মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ৪০ রানের দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যার সুবাদে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে জয় পেল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান সংগ্রহ করে। এরপর বৃষ্টি আইনে ৪৪ ওভারে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৪ রান। সেই টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের বোলিং তোপে ৩৫.৫ ওভারে মাত্র ১১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারতের মেয়েরা।
এদিন টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ধীরগতির করে বাংলাদেশের দুই ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার। তবে দলীয় ১৪ রানের মাথায় এই দুই ওপেনারই সাজঘরের পথ ধরেন। ইনিংসের অষ্টম ওভারে রান আউটের আগে ১৮ বলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি শারমিন। এর পরের ওভারেই অভিষিক্ত আমানজাত কৌরের বলে বিদায় নেন আরেক ওপেনার মুর্শিদা (১৩)।
এরপর ফারজানা হক ও নিগার সুলতানা জ্যোতি শক্ত হাতে রুখে দেন উইকেট পতনের ধারা। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর কোন উইকেট না বিলিয়ে দিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪০ রান তোলেন দুজনে মিলে। থিতু হয়ে বসা এই জুটি ভাঙেন কৌর; দলীয় ৬৩ রানে ফারজানা হককে মাঠছাড়া করার মাধ্যমে। ৪৫ বলে ২৭ করেন এই ব্যাটার সাজঘরে ফেরার আগে।
দলীয় ১০৩ রানে নিগার সুলতানার বিদায়ের পর একেবারে হুরমুরিয়ে ভেঙে পড়ে টাইগ্রেসদের ব্যাটিং লাইন আপ। বিদায়ের আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন এই ব্যাটার। বাকি ৫ ব্যাটারের ভেতর সর্বোচ্চ রান আসে সুলতানা খাতুনের ব্যাট থেকে। তিনি করেন ১৬।
ভারতের হয়ে অভিষেকেই চার উইকেট নিয়ে টাইগ্রেস শিবিরে ধ্বস নামিয়ে দেন আমানজাত কৌর। ৩১ রানের খরচায় তিনি নেন ৪ উইকেট। দুটি উইকেট নেন দেবিকা বৈদ্য। একটি উইকেট ঝুলিতে পুরেন দ্বীপ্তি শর্মা।
ছোট টার্গেট তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় ভারত। মারুফা আক্তারের করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে নিগার সুলতানার কাছে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় তারকা ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা। দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত।
পাওয়ারপ্লে শেষের আগেই আরও দুই উইকেট হারায় ভারত। অষ্টম ওভারে মারুফার দ্বিতীয় শিকার হন আরেক ওপেনার প্রিয়া পুনিয়া। মুর্শিদার হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ২৭ বলে ১০ রানের ইনিংস। আর পাওয়ারপ্লের শেষ বলে নাহিদার বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর। ৫ রানেই থামে তার ইনিংস।
এরপর উইকেটে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি স্বস্তিকা ভাটিয়া এবং জেমিমা রড্রিগেজও। রাবেয়া খানের জোড়া শিকারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দুজনেই। ব্যক্তিগত ১৫ রানে বোল্ড হয়েছেন স্বস্তিকা। আর মুর্শিদার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন জেমিমা। স্কোরবোর্ডে ভারতের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ৬১ রান।
এরপরেই ভারতের হয়ে হাল ধরেন দীপ্তি শর্মা এবং আমানজোত কৌর। দুজনের জুটি ছিল ত্রিশ রানের। তবে দলীয় ৯১ রানের মাথায় পরপর তিন উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। মারুফা আক্তারের জোড়া আঘাতের পর বিধ্বংসী হয়ে উঠা দীপ্তি শর্মাকে আউট করেন নাহিদা।
দীপ্তির বিদায়ে নিশ্চিত জয়ের পথেই এগোতে থাকে স্বাগতিকরা। সফরকারীদের হয়ে পুজা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান। সুলতানা খাতুনের বলে অধিনায়ক জ্যোতির কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনিও। সাজঘরে ফেরার আগে ১১ বলে ৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে।সফরকারীদের হয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে রানআউটের শিকার হন বারেদি আনুশা। আর তাতেই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়।
স্বাগতিকদের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মারুফা আক্তার। ৩ উইকেট পেয়েছেন রাবেয়া খান। একটি করে উইকেট গেছে নাহিদা আক্তার এবং সুলতানা খাতুনের ঝুলিতে। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ পেসার মারুফা আক্তার।