বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ৩২ দেশের লড়াই শেষে আজ ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্পেন ও ইংল্যান্ড। এবার বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেন তার মধুর শোধ নিলো স্পেনের মেয়েরা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল স্প্যানিশ মেয়েরা।
নারীদের বিশ্বকাপে প্রথমবার ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করেছে স্পেন। অথচ বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই দলকে কেউই ফেভারিট ভাবেনি। অধিনায়ক ওলগা কারমোনার ২৯ মিনিটে করা গোলটাই আজ স্পেনের নারী ফুটবলের নয়া ইতিহাস রচনা করল। যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জার্মানি ও জাপানের পর পঞ্চম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতল স্পেন।
রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৭৬ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে অল-ইউরোপিয়ান ফাইনালে স্পেনের মুখোমুখি হয়েছিল বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের ২৯তম মিনিটে ওলগা কারমোনার একমাত্র গোলেই ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন স্পেন।
এবারের আগে দুবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে কখনও নকআউট পর্বের ম্যাচ জয়ের অভিজ্ঞতাও ছিল না স্পেনের। ওই দুই আসর মিলিয়ে সাত ম্যাচে তাদের জয়ই ছিল স্রেফ একটি। গতবার শেষ ষোলোয় খেলা ছিল তাদের সেরা সাফল্য। সেই দলই এবার সাত ম্যাচের ছয়টি জিতে অবিশ্বাস্যভাবে মাথায় পরল বিশ্ব জয়ের মুকুট।
আর পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা উপহার দিলেও ফাইনালে এসে যেন বোতলবন্দি হয়েই ছিল এলা টনি আর লরেন হ্যাম্পরা। বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল দিয়েই পূর্ণ সুবিধা আদায় করেছে স্পেন। ফলে রেফারির শেষ বাঁশি বাজতে না বাজতেই আনন্দ-উল্লাসে মাতে স্পেনের খেলোয়াড়রা।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ইংলিশ মেয়েদের চাপে রেখেছিল স্পেন। বল পজিশন থেকে শুরু করে গোলে শট, সবখানেই স্প্যানিশ মেয়েদের আধিপত্য ছিল। যদিও ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ডই। ম্যানসিটি স্ট্রাইকার লরেন হ্যাম্প জোরালো শট নিলেও ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
ইংলিশদের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরেই যেন মনোবল ভেঙে পড়ে। বিপরীতে সুযোগ বুঝে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে স্পেন। ফলে ম্যাচের প্রথম বিশ মিনিট পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বল নিজেদের পায়েই রেখেছিল তারা। আক্রমণের সেই ধারাতেই প্রথম লিড পেয়ে যায় স্পেন।
২৯ মিনিটে বাম প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠে এসে ডি-বক্সের ঠিক আগেই লেফটব্যাক থেকে ওভারল্যাপ করে আসা অধিনায়ক ওলগা কারমোনাকে পাস দেন বার্সেলোনা তারকা মারিওনা কালদেন্তি। বাম পায়ের কোনাকুনি শটে ইংলিশ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ফুটবলার।
গোল করার পরেই যেন আরও বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিতে শুরু করে স্পেনের মেয়েরা। যে কারণে বল পজিশন ধরে রেখে আরও একাধিকবার আক্রমণে উঠেছে তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিনিশিং দুর্বলতায় আর গোল পাওয়া হয়নি তাদের। ফলে এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় স্পেন।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ইংল্যান্ড। লরেন জেমস আর ক্লোয়ি কেলিকে মাঠে নামান কোচ ওয়েগম্যান। যদিও অতি আক্রমণাত্মক মানসিকতার খেলার সুফল তারা পায়নি। খেলার ধারার বিপরীতে দুইবার বড় সুযোগ পেয়েছিল স্পেন। দুইবারই তাদের গোলবঞ্চিত করেছেন ইংলিশ গোলরক্ষক মেরি ইয়ার্পস।
প্রথমে স্পেনের কালদেন্তির একক প্রচেষ্টায় নেওয়া দারুণ এক শট ফিরিয়ে দিয়েছেন ইয়ার্পস। পরে তারকা জেনিফার হারমোসোর পেনাল্টিও ঠেকিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন ইয়ার্পস। তবে, দলের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোল আর পাওয়া হয়নি।
যোগ করা ১৩ মিনিটেও সুবিধা করতে পারেনি ইংলিশ মেয়েরা। উলটো হারমোসো, কালদেন্তিদের আক্রমণ ঠেকাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক ওলগার গোলেই প্রথমবারের মত নারীদের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেল স্পেন।