বিশ্বকাপের হেক্সা মিশনে প্রথম দুই ম্যাচে হারলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ মিলেছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেখান থেকেই যেন রচনা হয়েছে অজিদের বিশ্বকাপ অভিযানে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। দ্বিতীয় জয়ের মিশনে মাঠে নেমে পাকিস্তানি বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালিয়েছেন দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের সামনে বিশ্বকাপের ইতিহাসে পাহাড়সম টার্গেট দিলো প্যাট কামিন্সের দল।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বেঙ্গালুরুর এম. চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওয়ার্নার ও মার্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৬৭ রান সংগ্রহ করেছে অজিরা। ব্যাট হাতে ওয়ার্নার ১৬৩ ও মার্শ ১২১ রান করেন। বল হাতে পাক পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ১০ ওভারে ৫১ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৪৪ রান তাড়া করে জয় দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছিল পাকিস্তান। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে নিজেদের আগের রেকর্ড ভাঙতে হবে বাবর আজমদের।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন ওয়ার্নার ও মার্শ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেদের খোলস থেকে বের হয়ে আসেন তারা। এরপর শাহিন শাহ আফ্রিদি-হাসান আলিরা অজি শিবিরে কোনো আঘাত হানতে পারেননি। অবশ্য উসামা মীর ক্যাচ না ছাড়লে শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারতেন আফ্রিদি। উসামা যখন ক্যাচটা ছেড়েছেন তখন দলের রান মাত্র ২২, আর ১০ রানে ব্যাট করছিলেন ওয়ার্নার।
এরপর থেকেই আগ্রাসন চালাতে থাকেন ওয়ার্নার ও মার্শ। পাকিস্তানি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। এরপর এই দুই ব্যাটার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ড ভাঙার পেছনে ছুটছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ওপেনিং জুটিতে থেমেছে ২৫৯ রানের মাথায়। ৩৪তম ওভারের পঞ্চম বলে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ওই উসামা মীরের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন মার্শ। ১০৮ বলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় মার্শ খেলেন ১২৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ২৮২ রানের রেকর্ড জুটিটি তিলেকরত্নে দিলশান ও উপল থারাঙ্গার। ২০১১ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে তারা এই রেকর্ড জুটি গড়েন। ফলে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই ঠাঁই পেলেন ওয়ার্নার-মার্শ। এ ছাড়া বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিতে ৬ নম্বরে উঠে এসেছেন তারা। এর আগে বিশ্বকাপে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ ১৮১ রান করেছিল অজিরা।
মার্শ আউট হয়ে গেলেও অপরপ্রান্তে ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে পাক বোলারদের কচুকাটা করছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দলীয় ৩২৫ রানে ওয়ার্নার হারিস রউফের বলে শাদাব খানের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে থামে ১২৪ বলে ৯ ছয় ও ১৪ চারের সাহায্যে করা ১৬৩ রানের ইনিংস। একটা সময় মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপের দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড হয়ত ভাঙতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু ওয়ার্নার ও মার্শের বিদায়ের পর তাসের মতো ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার। দলের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। মার্কাশ স্টইনিশের ২১ ও জশ ইংলিশের ১৩ রান ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। এতে শেষ পর্যন্ত ৩৬৬ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।