ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে অবিশ্বাস্য জয় অস্ট্রেলিয়ার

ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে অবিশ্বাস্য জয় অস্ট্রেলিয়ার

অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় বললেও কমই বলা হবে। কয়েক দিন আগেই গলফ খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সেই চোট কাটিয়ে আজকের ম্যাচ দিয়ে আবারও বাইশ গজে ফিরেছেন। আফগানিস্তানের দেয়া ২৯২ রান তাড়ায় ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। এমন ধ্বংসস্তূপ থেকে একাই টেনে তুললেন অজিদের। চোট নিয়ে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ২০১ রানের ইনিংস।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান তুলেছে আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৯ রান করেছেন ইব্রাহিম জাদরান। অজিদের হয়ে ৩৯ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন জশ হ্যাজেলউড। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৬ ওভার ৫ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০১ রান করেছেন ম্যাক্সওয়েল।

২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ডাক খেয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার। তিনে নেমে ঝোড়ো শুরু করেন মিচেল মার্শ। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। নাভিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ১১ বলে করেছেন ২৪ রান।

মার্শ ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। এই অভিজ্ঞ ওপেনার উইকেটে এসে সময় নিয়ে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে করেছেন ১৮ রান। মার্কাস স্টইনিশ-জশ ইংলিশরাও রান পাননি। এই দুই ব্যাটার ফিরেছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। তাতে ৯১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় অজিরা।

এর পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। অষ্টম উইকেটে কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তিনি। যেখানে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিন্সের ব্যাট থেকে। বাকিটা সামাল দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। সেটাও আবার হ্যামস্টিংয়ের চোট নিয়ে।

তিন অঙ্ক ছুঁতে ম্যাক্সওয়েল খরচ করেছেন ৭৬ বল। এরপর ১৫০ রানের মাইলফকে পৌঁছেছেন ১০৪ বলে। সময় যত গড়িয়েছে ততই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেছেন তিনি। ১৫০ থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছেন মাত্র ২৪ বল। সবমিলিয়ে ১২৮ বলে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন তিনি।

এর আগে আফগানিস্তানের ইনিংসের শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন দুই ওপেনার ইব্রাহিম ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে জশ হ্যাজলউডের বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ দেন গুরবাজ। ফলে ২১ রান করেই তাকে সাজঘরে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে।

এরপর উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার রহমত শাহকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন ইব্রাহিম। এই দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে তোলেন ৮৩ রান। এই জুটি ভেঙ্গেছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। রহমত লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জস হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়েছেন ৪৪ বলে ৩০ রান করে।

২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার ট্রাভিস হেডকে শূন্য রানে ফেরান নাভীন-উল-হক। এরপর এই পেসারই মিচেল মার্শকে ব্যক্তিগত ২৪ রানে এলবি করেন।

দলীয় নবম ওভারের প্রথম দুই বলে ডেভিড ওয়ার্নার (১৮) ও জস ইংলিসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এরপর মার্নাস লাবুশানে রান আউটে কাটা পড়েন। আর মার্কাস স্টোইনিস ও মিচেল স্টার্ককে রশিদ খান দ্রুত ফেরালে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা।

তবে এরপরই শুরু হয় ম্যাক্সওয়েল-প্যাট কামিন্স যুদ্ধ। যদিও এই যুদ্ধের একক নায়ক বলা চলে ম্যাক্সওয়েলকেই। কেননা ১৭০ বলে ২০২ রানের পার্টনারশিপে কামিন্স যে মাত্র ১২ রান করেছেন। বাকি ১৭৯ রানই এসেছে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে। ওয়ানডে চতুর্থ ও এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা এই ডানহাতি শেষ পর্যন্ত ১২৮ বরে ২১টি চার ও ১০টি ছক্কায় ২০১ রানে অপরাজিত থাকেন। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও সেরা স্কোর।

টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করে আফগানিস্তান। উদ্বোধনী জুটিতে ৮ ওভারে ৩৮ রান তোলেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। অবশেষে গুরবাজকে ২১ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জস হ্যাজেলউড। তবে লড়াই চালিয়ে যান জাদরান। এই ওপেনার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রহমত শাহর সঙ্গে ১০০ বলে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।

রহমত ৩০ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের শিকার হন। এরপর জাদরান প্রতিটি উইকেটে ছোট ছোট জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ বাড়ান। এ সময় তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিও। মাঝে আফগান অধিনায়ক শহিদী ২৬ করে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন।

অ্যাডাম জাম্পার বলে আউট হওয়া আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২২ রান করেন। শেষ দিকে উইকেটে এসে ঝড় তোলেন রশিদ খান। মাত্র ১৮ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। আর জাদরান ১৪৩ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১২৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন।

অজি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট পান হ্যাজেলউড। এছাড়া একটি করে উইকেট দখল করেন স্টার্ক, ম্যাক্সওয়েল ও জাম্পা।

ম্যাক্সওয়েল,অবিশ্বাস্য,জয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত